ভাওয়াল রাজবাড়ী ভ্রমণ গাইড | গাজীপুরের দর্শনীয় স্থান

চারদিকে কারুকার্য খচিত দেয়ালে ঘেরা এই রাজবাড়িটি ৫ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করার বদলে এই রাজাবাড়ির প্রধান ভবনকে ব্যবহার করা হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে। আর আশেপাশের অন্যান্য ভবনগুলো জেলা জজকোর্ট এর যাবতীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এর অথেনটিক ভিউ এখন অনেকটাই নমনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।

কিন্তু এখনও সুযোগ পেলেই প্রতিনিয়ত অসংখ্য লোকজন রাজবাড়ির অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশে সময় কাটাতে চলে আসে। শিক্ষা সফরে আসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী। আর যে কোনো কাজে গাজীপুরে আসলে তো অবশ্যই একবার ঘুরে দেখা উচিত উল্লেখযোগ্য এই ঐতিহাসিক নিদর্শন।

ভাওয়াল রাজবাড়ী সম্পর্কে কিছু তথ্য

বাড়ির গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর প্রধান ভবন সম্পর্কে। গেইট থেকে প্রবেশ করলেই প্রথমে চোখে পড়বে দুইতলা বিশিষ্ট একটি সুদর্শন ভবন। এটিই ভাওয়াল রাজবাড়ীর প্রধান ভবন। দোতলায় ওঠার জন্য একটি কাঠের সিঁড়ি থাকলেও এখন তা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

এছাড়াও অন্যান্য সকল ভবন মিলিয়ে এই বাড়িতে মোট ৩৬৫ টি কক্ষ রয়েছে। প্রধান ভবনের পেছনে আছে একটি সুবিশাল উঠান ও একটি মঞ্চ । বাড়ির পশ্চিম দিকে আছে একটি সুবিশাল দিঘি। বাড়ির ভেতরের দিক থেকে দিঘিতে একটি শান বাধানো ঘাট রয়েছে। আর এদিক থেকে দিঘির ভিউ খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। বাড়ির গেইট থেকে বেরিয়ে রাস্তা পাড় হলেই রাজবাড়ীর বিরাট একটি মাঠ রয়েছে।

এই মাঠে বর্তমানে সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান, বাৎসরিক মেলা কিংবা যে কোনো উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাছাড়া বিকালে অসংখ্য লোকজন হাঁটতে আসে, নিকটস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েরা এই মাঠে এসে আড্ডা দেয়, খেলাধুলা করে।

পুরো মাঠটি বাউন্ডারি করা এবং চারপাশে বেশ কয়েকটি প্রবেশ গেইট রয়েছে।
রাজবাড়ীর প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় চোখে পড়বে নাগালিঙ্গম ফুলের গাছ, যা হয়তো আপনি এর আগে কখনও দেখেননি। আরও আছে বেশ কয়েকটি ভাষ্কর্য। পুরো বাড়ির দেয়াল, পিলার, ফটক ও অন্যান্য স্থাপনায় প্রাচীন শিল্পকর্মে এক চমৎকার নিদর্শন ফুটে ওঠে।

ভাওয়াল রাজবাড়ী যাওয়ার উপায়

গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ী অবস্থিত। স্থানীয় ভাবে জায়গাটিকে রাজবাড়ি বলেই অভিহিত করা হয়। ঢাকা থেকে আপনি সড়কপথে কিংবা রেলপথে খুব সহজেই ভাওয়াল রাজবাড়ী পৌঁছাতে পারবেন। এখানে দুটি উপায় সম্পর্কেই তুলে ধরা হলো।

সড়কপথে ভাওয়াল রাজবাড়ী যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে সড়কপথে ভাওয়াল রাজবাড়ী যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি গাজীপুর যাওয়ার জন্য বাস পেয়ে যাবেন৷ গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী, আজমেরি গ্লোরি, গাজীপুর পরিবহন সহ বিভিন্ন বাস সরাসরি গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসে।

তাছাড়া মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসা বাসে উঠেও গাজীপুর চৌরাস্তা নামতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি বাস ভাড়া পড়বে ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আপনি কোথা থেকে বাসে উঠবেন তার ওপরে ভাড়া নির্ভর করবে।

চৌরাস্তা নেমে পূর্ব দিকের রাস্তায় চলে গেলেই লোকাল অটো পাবেন জয়দেবপুর রেলগেট যাওয়ার জন্য। জবপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে জয়দেবপুর রেলগেট। রেলগেট থেকে ভাওয়াল রাজবাড়ী হেঁটে গেলে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তবে এখান থেকে অটো কিংবা রিকসা নিয়ে একদম রাজবাড়ীর গেইটে নামতে পারবেন৷ রেলগেট থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত রিকশা ভাড়া মাত্র ১০ টাকা।

রেলপথে ভাওয়াল রাজবাড়ী যাওয়ার উপায়

রেলপথে ভাওয়াল রাজবাড়ী যেতে চাইলে আপনি ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন, এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন থেকেও ট্রেন ধরতে পারেন। তবে ট্রেনে ওঠার আগে জেনে নিতে হবে ট্রেনটি গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে থামবে কিনা৷

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেনে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা এবং আন্তঃনগর ট্রেনে ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। তবে মনে রাখবেন জয়দেবপুর আসার জন্য আপনার জন্য ট্রেনে কোনো সিট বরাদ্দ থাকবে না।

ভাগ্যক্রমে সিট খালি পেলে বসতে পারবেন কিন্তু না পেলে পুরোটা পথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হবে৷ ঢাকা থেকে গাজীপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো। জয়দেবপুর স্টেশনে নেমে রেলগেট থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা ১০ টাকা করচ করে রিকশা নিয়ে ভাওয়াল রাজবাড়ীর প্রবেশ গেইটে চলে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

ভাওয়াল রাজবাড়ী মূলত কোনো পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র নয়। তাই এখানে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আর ঢাকা থেকে যেহেতু খুব বেশি দূরে নয় তাই দিনে দিনে ঘোরাঘুরি করে আবার চলে যেতে পারবেন৷ তবে একান্তই যদি থাকার ইচ্ছা থাকে কিংবা প্রয়োজন হয় তাহলে গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টে থাকতে পারবেন। ভাওয়াল রাজবাড়ীর কাছাকাছি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রিসোর্ট হলো: ছুটি রিসোর্ট, সারাহ রিসোর্ট, সোহাগ পল্লী রিসোর্ট, রিভারিয়া হলিডে রিসোর্ট, স্প্রিং ভ্যালী ইত্যাদি। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তায় বেশ কিছু আবাসিক হোটেল-ও পেয়ে যাবেন।

কোথায় খাবেন?

রাজবাড়ি ও রাজবাড়ীর মাঠের মধ্যবর্তী রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি স্ট্রিট ফুড এর দোকান পাবেন৷ এখানকার ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, চা ও অন্যান্য খাবার খুবই জনপ্রিয়। তাছাড়া রাজবাড়ীর মাঠের আসেপাশে বেশ কয়েকটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রেল গেট এর দিকে এগিয়ে আসলে “সুরমা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট” নামক একটি রেস্তোরাঁ পাবেন। এখানে বিরিয়ানি, গ্রিল চিকেন, কাবাব, সাধারণ বাংলা খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের চাইনিজ খাবার পাবেন। এই রেস্টুরেন্টটি সমগ্র গাজীপুরে বেশ স্বনামধন্য একটি রেস্টুরেন্ট। তাই ভাওয়াল রাজবাড়ী ভ্রমণে আসলে আপনার খাওয়া দাওয়া নিয়ে টেনশনর কোনো কারণ নেই।

ভাওয়াল রাজবাড়ী ভ্রমণ খরচ

যদি বলি ভাওয়াল রাজবাড়ী ভ্রমণ করতে আপনার এক টাকাও খরচ হবে না? হ্যাঁ, কথাটা কিন্তু একদম সত্যি। ভাওয়াল রাজবাড়ী প্রবেশের জন্য আপনার কোনো ধরনের প্রবেশ মূল্য দিতে হবে না। পুরো রাজবাড়ী ও রাজবাড়ীর মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে রাজবাড়ীর ভেতরে ঢোকার জন্য সব সময় অনুমতি থাকে না।

এক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন রাজবাড়ী ভ্রমণের উদ্যেশ্যেই অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনি এখানে এসেছেন, তাহলে রাজবাড়ীর দেখাশোনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন নিজেই ঘুরে ঘুরে আপনাকে পুরো বাড়ি দেখাবে৷
এখানে আপনার খরচ হিসেবে লাগছে শুধু গাড়ি ভাড়া এবং খাওয়ার খরচ। তো সড়কপথে আসলে আপ-ডাউন মিলিয়ে সর্বোচ্চ আপনার ৩০০ টাকা বা তারও কম খরচ হবে।

আর রেলপথে আসলে তো ১০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে৷ খাওয়ার খরচ নির্ভর করবে পুরোপুরি আপনার ওপর। তবে ১০০ টাকা খরচ করলে এক বেলায় মোটামুটি ভালোভাবেই খেতে পারবেন৷ তাহলে বলা যায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে আপনি ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে খুব ভালোভাবেই ঘুরে আসতে পারবেন।

ভাওয়াল রাজবাড়ীর কাছাকাছি আরও যা যা ঘুরে দেখতে পারেন:

  • ১. রাণী বিলাসমনি সরকারি বিদ্যালয়।
  • ২. ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান (ন্যাশনাল পার্ক)
  • ৩. ভাওয়াল বদরে আলম সরাকারি কলেজ
  • ৪. টাকশাল
  • ৫. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
  • ৬. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  • ৭. তুলা গবেষণা কেন্দ্র (ইত্যাদি)

Leave a Comment

Scroll to Top