রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট যাওয়ার উপায়, প্যাকেজ খরচ, সুযোগ সুবিধা

ঢাকা থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে শালবনের গভীরে অবস্থিত সুন্দর এক বিনোদনকেন্দ্র রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট। নামের সাথে রাঙামাটি কথাটি যুক্ত হলেও এই রিসোর্ট কিন্তু ঢাকা সংলগ্ন গাজীপু মহানগরে অবস্থিত। তাই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে নিজেকে একটু স্বস্তি দিতে চাইলে চলে যেতে পারেন রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্টে।

যে কোনো কর্পোরেট অনুষ্ঠান, বার্ষিক বনভোজন, পারিবারিক পিকনিক কিংবা ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট একটি আদর্শ বিনোদন কেন্দ্র। গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে চমৎকার ডেকোরেশন সমৃদ্ধ রিসোর্টের প্রতিটি বিষয়বস্তু আপনার আনন্দ ভ্রমনকে পূর্ণতা দেবে।

রাতে থাকার জন্য আছে চমৎকার ভিলা এবং কটেজ। কটেজের ইন্টেরিয়র এর ডিজাইন এতোটাই নান্দনিক যে আপনি একটি লাক্সারিয়াস ট্যুরের অনুভূতি পাবেন৷ আছে সুইমিং পুল, লেক, কিডস জোন, বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট, নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থা, বারবিকিউ করার ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, ডাইনিং প্লেস সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। তাই মনোরম এই পরিবেশে একটা দিন খুব লাক্সারিয়াস ভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন।

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্টে আপনি রুম বুকিং করে অথবা পিকনিক স্পট বুকিং করে ঘুরে আসতে পারবেন৷ বেশিরভাগ অতিথি পিকনিক স্পট বুকিং এর মাধ্যমেই রিসোর্টে ঘুরতে যায়। রিসোর্ট এর মধ্যে চারটি পিকনিক স্পট রয়েছে।

স্পটগুলোর আবার চমৎকার সব নাম রয়েছে। যেমন: কামিনি, যামিনী, বিজ ফিল্ড ও এমফি থিয়েটার। প্রতিটি স্পটের জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সময় ও উপলক্ষ অনুযায়ী পিকনিক স্পটের ভাড়ায় তারতম্য থাকে। এখানে সম্ভাব্য ভাড়ার একটি হিসেব উল্লেখ করা হলো।

  • কামিনি পিকনিক স্পট এর এক দিনের বুকিং চার্জ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে হবে৷
  • যামিনি পিকনিক স্পটের বুকিং চার্জও ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। সময় ভেদে এর থেকে বোশিও হতে পারে।
  • বিজ ফিল্ড স্পটের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা।
  • এমফি থিয়েটার স্পটের ভাড়া ৪০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা।

এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে রুম বা কটেজ ভাড়া করেও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কটেজ ভেদে ভাড়া ও সুযোগ সুবিধায় তারতম্য রয়েছে। প্রতিটি কটেজ রুমের সম্ভাব্য ভাড়া সম্পর্কে জেনে নিন।

১. প্লাটিনাম কটেজ

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট এর সবথেকে লাক্সারিয়াস ও সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কটেজ হলো প্লাটিনাম কটেজ। এই কটেজে নিচতলা বুকিং করলে থাকবে ৩ টি বেড রুম ও ১ টি ড্রইং রুম ও এটাস্ট ওয়াশরুম। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি।

আর প্লাটিনাম কটেজের দোতলা বুকিং করলে সেখানে পাবেন ২ টি বেডরুম ১ টি ড্রইং রুম ও এটাস্ট ওয়াশরুম। সেক্ষেত্রে ভাড়া ২০ হাজার টাকার আশেপাশে থাকবে।

প্রতিটি রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা আছ যেখান থেকে সবুজ প্রকৃতির চমৎকার ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। সেই সাথে থাকবে সুইমিং পুল, ইনডোর ও আউটডোর গেইম, বোটিং, রিসোর্ট পরিদর্শন, ওয়াইফাই সহ রুম সার্ভিস এর ব্যবস্থা।

২. গোল্ডেন কটেজ

প্রতিটি গোল্ডেন কটেজে থাকবে ২ টি বেড রুম এবং ১ টি ড্রয়িং রুম। ২ টি বেড রুমের মধ্যে ১ টি ডবল বেড ও ১ টি সিঙ্গেল বেড থাকবে।প্রতিটি রুম থেকে অডিটোরিয়াম ভিউ বেশ চমৎকার ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। থাকবে সুইমিং পুল, রিসোর্ট পরিদর্শন, ওয়াইফাই সার্ভিস। এক দিন এক রাতের জন্য গোল্ডেন কটেজ এর ভাড়া ১০ হাজার টাকার আশেপাশে হবে।

৩. সিলভার কটেজ

সিলভার কটেজগুলো ডবল বেড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাব সমৃদ্ধ। সিলভার কটেজ এর সাথেও থাকবে রিসোর্ট এর যাবতীয় সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ ও পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার সুযোগ। গোল্ডেন কটেজ এর ভাড়া ৭ হাজার টাকার আশেপাশে হবে।

বি. দ্র: দর্শনার্থীদের চাপ বাড়লে কিংবা বিশেষ বিশেষ দিনে পিকনিক স্পট সহ সকল কটেজের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বুকিং দেয়ার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে খরচ সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। সেই সাথে খরচের বিষয়ে স্পষ্টভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বুকিং দিতে হবে।

যোগাযোগ:

খাওয়ার ব্যবস্থা

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট এর নিজস্ব ডাইনিং প্লেস ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে মোটামুটি বাজেটের মধ্যে সব ধরনের খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে রিসোর্ট এর রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারবেন। পিকনিক বা কর্পোরেট অনুষ্ঠানের জন্য যে কোনো খাবারের অর্ডার করে রাখলে তা যথাযথ ভাবে সার্ভ করার দায়িত্ব রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের। এছাড়া প্রতিটি পিকনিক স্পটে রান্না করার জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। তাই রান্নার সরঞ্জাম ও বাবুর্চি সাথে নিয়ে গেলে নিজেরা রান্না করেও খেতে পারবেন।

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট যাওয়ার উপায়:

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্টে যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে গাজীপুর এর চন্দ্রা মোড় চলে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরাসরি চন্দ্রা মোড় যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। আর যদি সরাসরি চন্দ্রা যাওয়ার বাস না পাওয়া যায় তাহলে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পড়বে। সেখান থেকে লোকাল বাসে চন্দ্রা মোড় চলে যেতে পারবেন।

চন্দ্রা মোড় নেমে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট এর সাইনবোর্ড দেয়া একটি রাস্তা দেখতে পাবেন। ঐ রোড ধরে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্টে পৌঁছে যাবেন। চন্দ্রা মোড় থেকে অটো বা সিএনজি রিজার্ভ করে রিসোর্টে যেতে পারবেন। তাছাড়া গাজীপুরের শফিপুর থেকে সিএনজি রিজার্ভ করেও সরাসরি রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট এর প্রবেশ গেইটে পৌঁছাতে পারবেন।

রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট এর সুযোগ সুবিধা

আপনার অবকাশ ভ্রমণের একটি কমপ্লিট প্যাকেজ রয়েছে গাজীপুর ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্টে। এর মধ্যে সবথেকে উপভোগ্য বিষয়টি হলো এর চমৎকার ডেকোরেশন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া বিনোদনের সকল কৃত্রিম আয়োজন তো রয়েছেই। রিসোর্ট এর উল্লেখযোগ্য কিছু আকর্ষণ ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন।

১. সুইমিং পুল

রিসোর্টে মূলত ২ টি সুইমিং পুল রয়েছে। একটা কিডস পুল অন্যটি প্রধান সুইমিং পুল। উপবৃত্তাকার বড় সুইমিং পুল এর মধ্যখানে একটি বৃত্তাকার কিডস সুইমিং পুল রয়েছে। পুলের পানিতে সাতার কেটে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবেন বেশ আনন্দের সাথে।

২. কনফারেন্স হল

যে কোনো কর্পোরেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলে রিসোর্ট এর কর্পোরেট হল বুকিং করতে পারবেন৷ আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ ইন্টেরিয়র আপনাকে একটি প্রানবন্ত অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

৩. আবাসিক কটেজ

রাত্রি যাপনের জন্য আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক কটেজ। প্রতিটি কটেজের ডেকোরেশন ও সুযোগ সুবিধা আপনার অবকাশ ভ্রমণকে আরামদায়ক ও উপভোগ্য করে তুলবে।

৪. বোটিং ও ফিশিং

রিসের্ট এর ভেতরে আছে ছোট পুকুর ও লেক। এই লেকে নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আপনার যদি মাছ ধরার প্রতি আকর্ষণ থাকে তাহলে এই ট্রিপটি আপনাকে আরও বেশি আনন্দ দিতে পারে। এছাড়া লেকের পানিতে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে ঘন্টা চুক্তিতে নৌকা ভাড়া নিতে হবে। পুকুরের ওপরে বাঁশ ও কাঠের সাঁকোর সাথে একটি টংঘর বা কুটির রয়েছে। এখানে বসে প্রকৃতি অনুভব করার মুহূর্তগুলো দারুণ কাটবে।

৫. ইনডোর ও আউটডোর গেইম

রিসোর্টের মধ্যে কয়েকটি ছোট বড় খেলার মাঠ রয়েছে। এই মাঠে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে পারবেন৷ ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস সহ যে কোনো খেলার সরঞ্জাম রিসোর্ট সরবরাহ করবে।

তাছাড়া পিকনিক স্পট, শালবন, রেস্টুরেন্ট, ডাইনিং প্লেস, বারবিকিউ কর্ণার, লাভ কর্ণার সব কিছুই একজন অতিথিকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যথেষ্ট।

আশাকরি গাজীপুরের রিসোর্ট ভ্রমণের প্লান করলে রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট আপনার পছন্দের তালিকায় থাকবে। একটি চমৎকার ট্রিপের মাধ্যমে শরীর ও মন রিফ্রেশ করতে রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট আপনাকে সার্বিক ভাবে সাপোর্ট করবে।
ছবিঃ রাঙামাটি ওয়াটারফ্রন্ট রিসোর্ট পেজ

Leave a Comment

Scroll to Top