নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট প্যাকেজ খরচ, সুযোগ সুবিধা ও ঠিকানা

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় প্রকৃতির কোল ঘেষে ২৫ বিঘা জমির উপরে তৈরি করা হয়েছে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট। অভিনেতা জুটি তৌকির আহমেদ ও বিপাশা হায়াত এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই রিসোর্টে আগত অতিথিদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে।

৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সার্বক্ষণিক রিসোর্টে আগত অতিথিদের আপ্যায়নে নিয়োজিত থাকে। লেকের ওপরে নির্মিত কটেজ ও তার সাথে লাগোয়া বারান্দা, সবুজ প্রকৃতি, সুইমিং পুল, পার্ক, রাতের মনোরোম পরিবেশ মুহূর্তেই আপনার মন ভালো করে দেবে।

এছাড়াও আছে দিঘির পানিতে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ, বারবিকিউ করার ব্যবস্থা, মুভি থিয়েটার, শুটিং স্পট, কাঠের তৈরি পুল বা সাঁকো, মাছ ধরার ব্যবস্থা, সুইমিং পুলের পাশে জুস বার, কৃত্রিম ঝর্ণা, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স হল সহ বিভিন্ন আয়োজন।

মনোরম পরিবেশে পরিবারের সবাই মিলে ছুটি কাটাতে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে পিকনিক করতে কিংবা যে কোনো কর্পোরেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলে চলে যেতে পারেন নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে। এছাড়া এন্ট্রি ফি দিয়ে ঢুকে সারাদিন ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবেন।

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ

সাধারনের জন্য রিসোর্টের প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। তবে যারা পিকনিক প্যাকেজে আসবে অথবা রুম বুকিং দিয়ে আসবে তাদের জন্য কোনো এন্ট্রি ফি লাগবে না।
আপনি যদি ৫০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে সাধারণ টিকেটে প্রবেশ করেন তাহলে সুইমিং পুল ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা চার্জ দিতে হবে। সুইমিং করার সময় পুলের পাশের জুস বার থেকে জুস নিতে পারবেন।

৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ফ্লেভারের জুস পাবেন। এছাড়া নৌকায় ঘুরতে চাইলে ১ ঘন্টার জন্য ৩০০ টাকা চার্জ দিতে হবে। চাইলে নিজেরা বোট রাইডিং করতে পারবেন অথবা প্রয়োজন হলে সাথে মাঝি নিতে পারবেন। আর রিসোর্ট এর রেস্টুরেন্টে বাললা, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান খাবার খেতে পারবে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা মধ্যে। তাহলে সব মিলিয়ে বলা যায় সাধারণ টিকেটে ১৫০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালোভাবে ঘুরে আসতে পারবেন৷

যদি আপনি রাতে থাকতে চান তাহলে থাকার জন্য কটেজ বা রুম ভাড়া নিতে হবে। এতে করে রাতের প্রকৃতির সাথে রিসোর্ট এর দারুন এক পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। নাইট স্টে কটেজ এবং রুমের ভাড়া এবং এর অন্তর্ভুক্ত সুযোগ সুবিধা জেনে নিন।

ডিলাক্স কটেজ

ডিলাক্স কটেজ ভাড়া করলে ২ জন থাকতে পারবেন। এই কটেজটির সাথে লেকের দিকে লাগোয়া ঝুল বাড়ান্দা রয়েছে। সুযোগ সুবিধা হিসেবে হাই স্পিড ওয়াইফাই সার্ভিস, ডবল বেড, সকালের নাশতা পাবেন৷ রুম ভাড়া ১০,৭৫২ টাকা। চাইলে এই ১৫০০ টাকা এক্সট্রা চার্জ দিয়ে এই কটেজে ৩ জন থাকতে পারবেন। ৩ জনের জন্যই থাকবে সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ, নৌকায় ঘুড়ে বেড়ানোর সুযোগ ও পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার সুযোগ। তবে কোনো রুম সার্ভিস থাকবে না।

প্রিমিয়াম সুইট

প্রিমিয়াম সুইট বুকিং করলে ৪ জন থাকতে পারবেন। থাকবে ২ টা বেড, লেকের চমৎকার ভিউ, ওয়াইফাই, সুইমিং পুল, বোটিং, সম্পূর্ণ রিসোর্ট ঘুরে দেখার সুযোগ, সকালের নাশতা। এক রাতের জন্য ভাড়া ২২,৭৭০ টাকা। রুম সার্ভিস থাকবে না।

কাপল রেগুলার

রেগুলার কাপল রুম ভাড়া নিলে ২ জন থাকতে পারবেন। একটি বেড, ওয়াইফাই সার্ভিস, সকালের নাশতা, সুইমিং পুল, বোটিং এবং পার্ক পরিদর্শনের সুযোগ থাকবে। কিন্তু কোনো রুম সার্ভিস পাবেন না। দুই জনের জন্য ভাড়া ৬,৯৫৭ টাকা।

ফ্যামিলি সুইট

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট এর ফ্যামিলি সুইট বুকিং করলে আপনি তুলনামূলক একটু বেশিই সুবিধা পাবেন৷ ৪ জনের থাকার জন্য ২ টি বেডরুম ও সাথে ২ টি এটাস্ট ওয়াশরুম থাকবে। থাকবে ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস, ওয়াইফাই, সকালের নাশতা, সুইমিং পুল, বোটিং ও পার্ক পরিদর্শন এর সুযোগ। পিক-আপ সার্ভিস ও থাকবে তবে এক্সট্রা চার্জ প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে এয়ারপোর্ট থেকে পিক-আপ করা হবে। ৪ জনের জন্য ভাড়া লাগবে ২০,২৪০ টাকা।

এছাড়া ডে আউট প্যাকেজ বুকিং করে পিকনিক এর আয়োজন করতে পারবেন৷ তবে এই প্যাকেজ অফারটি পারচেজ করতে চাইলে কমপক্ষে ১০ জনের জন্য বুকিং দিতে হবে। ডে আউট প্যাকেজ এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরে খাবার ও বিকালের নাশতা।

আরও থাকবে সুইমিং পুল, পার্কে ঘোরার সুযোগ, বোটিং, ফ্রী এন্ট্রি। বিশ্রাম নেয়া ও ফ্রেশ হওয়ার জন্য প্রতি ১০ জনের জন্য একটি রুমের ব্যবস্থা থাকবে৷ দুপুরের খাবারের মেনুর ওপরে ভিত্তি করে প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হবে। চাইনিজ মেনু হলে প্যাকেজ মূল্য ২৭০০ টাকা, ইন্ডিয়ান মেনু হলে ২৫০০ টাকা এবং বাংলা খাবারের মেনু হলে ২২০০ টাকা।

বি. দ্র: ফিশিং এবং জুস বারের খরচ পিকনিক প্যাকেজ বা রুম ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত হবে না। তাছাড়া রুম বুকিং করলে রাতের কিংবা দুপুরের খাবার নিজেদের কিনে খেতে হবে। রিসোর্ট রেস্টুরেন্টে সব ধরনের খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে।
৩ থেকে ৮ বছরের বাচ্চাদের জন্য ৫০% চার্জ প্রযোজ্য। ৮ বছরের বেশি হলে পুরো প্যাকেজ মূল্য অথবা রুম ভাড়া প্রদান করতে হবে।

যোগাযোগ:

  • ঠিকানা- বাঙালপাড়া, চিনশুখানিয়া গ্রাম, রাজাবাড়ি বাজার, শ্রীপুর, গাজীপুর।
  • মোবাইল- ০১৭৭২-২২৪২৮১ বা, ০১৯৭৭-৩৫৬১৬৫
  • ওয়েবসাইট- www.nokkhottrobari.com
  • ইমেইল- sales@nokkhottorobari.com

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট যাওয়ার উপায়

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে গাজীপুর মহানগরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা চলে যেতে হবে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে আপনি রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা নামতে পারবেন৷ ঢাকার মহাখালী থেকে প্রতিদিন ২০ মিনিট পর পর ময়মনসিংহের বাস ছেড়ে যায়।

এই বাসে উঠে কনট্রাকটরকে বললেই আপনাকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা নামিয়ে দেবে। ভাড়া লাগবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।তাছাড়া গুলিস্তান থেকে ২০ মিনিট পর পর প্রভাতী বনশ্রী নামে একটি বাস গাজীপুরের মাওনার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এই বাসে উঠেও রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা নামতে পারবেন।

এছাড়া ঢাকার অন্য কোনো প্রান্ত থেকে যেতে চাইলে প্রথমে গাজীপুরের বাসে চেপে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছাতে হবে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে তাকওয়া নামক লোকাল বাসে করে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা যেতে পারবেন৷
রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট যাওয়ার বাস এবং সিএনজি পাবেন।

সেই বাস বা সিএনজি করে যেতে হবে রাজাবাড়ী বাজারে। বাস ভাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা লাগবে৷ রাজাবাড়ী বাজারে নেমে ডান দিকের মোড় থেকে অটোরিকশা নিয়ে দেড় কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন চিনশুখানিয়া গ্রামের বাঙালপাড়ার নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে।

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট কেন জনপ্রিয়?

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট এর আশপাশের নিস্তব্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও চমৎকার ডেকোরেশন এর জন্য রিসোর্টটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এই রিসোর্ট এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো ১১ টি লেক সাইড কটেজ। কটেজগুলো মূলত লেকের পাশে টং ঘরের মতো শাল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিটি কটেজের পেছন দিকে লেকের ওপরে একটি ঝুল বারান্দা ও বারান্দার সাথে লেকের ওপরে কাঠের তৈরি একটি লাগোয়া রাস্তা রয়েছে৷ এই কটেজগুলো নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট এর একটি বিশেষ আকর্ষণ।
তাছাড়া এই রিসোর্ট এর সুইমিং পুল এর ডিজাইনও অনেকটা ব্যতিক্রমী। পুলের নিচের অংশে নকশা করা এবং আকৃতিও কিছুটা অদ্ভুত।

আরও আছে একটি কৃত্রিম লেক যেখানে বোটিং ও ফিশিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়াও লেকের ওপরে একটি কাঠের পুল তৈরি করা হয়েছে। আার লেকের পশ্চিম দিকে সারি বাঁধা ১১ টি কটেজ দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে। এখানকার শুটিং স্পটগুলোও একটি আকর্ষনের বিষয় যেখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি নাটকের শুটিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ব্যবস্থা ও রিসোর্ট এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তরিকতার জন্য রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আশাকরি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গেছেন৷ তবে রাতে থাকার জন্য বা পিকনিক গ্রুপ হিসেবে যাওয়ার আগে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিত।
– ছবিঃ নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট পেজ

Leave a Comment

Scroll to Top