বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক ভ্রমণ গাইড | যাওয়ার উপায়, খরচ ও অন্যান্য

বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু ‘যমুনা সেতু’ তথা বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক। এটি মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার আওতায় পড়েছে এবং এটি সিরাজগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রাথমিক পর্যায়ে যদিও এই বিনোদন কেন্দ্রের জনপ্রিয়তা শুধু সিরাজগঞ্জের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এই পার্কে ঘুরতে আসে।

মূলত বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে আসা পর্যটকদের ভ্রমনে পরিপূর্ণতা আনার লক্ষে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা সেতুরা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর থেকে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ সেতুর আশেপাশের এলাকায় বনায়ন প্রকল্প শুরু হয়েছিল।

তারই সূত্র ধরে ২০০৭ সালে ১২০ একর জায়গা নিয়ে বন বিভাগ কর্তৃক চমৎকার এই ইকো পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পশুপাখি, যনুনা নদীর চমৎকার দৃশ্য, বঙ্গবন্ধু সেতুর সবথেকে সুন্দর ভিউ উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে চলে যেতে হবে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক।

বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক কীভাবে যাবেন?

ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চলে যাবেন মহাখালী বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে অভি ক্লাসিক ও এসআই নামক দুটি বাস কিছুক্ষন পর পর সিরাজগঞ্জের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়।

তাছাড়া মিরপুর ২ থেকে ঢাকা লাইনস ও এসআই পরিবহন এর বাস পাবেন যা সরাসরি সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত যাবে।

এসকল বাসে এসি ও নন এসি ক্লাসের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা। সিরাজগঞ্জ থেকে স্থানীয় পরিবহনে করে চলে যেতে পারবেন বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক এর প্রবেশ গেইটে।

বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক কেন যাবেন?

শহরের কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা থেকে নিজেকে ছুটি দেয়ার জন্য মন চায় কোথাও চলে যেতে। যেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল, যান্ত্রিক পরিবেশ আর শহুরে জীবনযাত্রার ধরাবাঁধা নিয়ম। থাকবে শুধু বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। ঠিক এমনই একটি পরিবেশ পাবেন বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্কে।

শুধু যে পার্কের মধ্যবর্তী সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে তা কিন্তু না। যাওয়ার পথে প্রতিটি দৃশ্য আপনার মন কেড়ে নেবে। কোথাও সারি সারি গাছের সামিয়ানা, আবার কোথাও গ্রামীণ পরিবেশের মুগ্ধতা, কোথাওবা খাল আর পুকুরের টলটলে পানি দেখতে দেখতে কখন যে পথ ফুরিয়ে যাবে আপনি টেরই পাবেন না।

তারপর পার্কের আগে বেশ কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন। পুরোটা পথের দু’ধারে উঁচু উঁচু গাছের সারি। ইট বিছানো রাস্তায় এমন প্রকৃতির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মজাই আলাদা।

যারা ব্লগ ভিডিও তৈরি করতে চান তাদের জন্য এই রাস্তার ভিউ গুলো হবে সবথেকে আকর্ষণীয় ভিডিও শুট। হাঁটতে হাঁটতে প্রবেশ গেইটের কাছে আসলেই পাবেন টিকেট কাউন্টার। ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে আপনাকে পার্কে প্রবেশ করতে হবে।

গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই পুরো পার্কের একটি ম্যাপ দেখতে পাবেন। ঐ ম্যাপ অনুযায়ী সামনের দিকে আগালে প্রতিটা স্পট খুব সুন্দরভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন।

অর্থাৎ কোনো স্পট বাদ পড়ার চান্স থাকবে না। বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক এর বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য বিষয় রয়েছে। এখানে ধারাবাহিক ভাবে সবগুলো বিষয় উল্লেখ করা হলো।

১. পার্কের সবুজ পরিবেশ

পার্কের পৌঁছানোর পুরো রাস্তাসহ পার্কের ভেতরের পরিবেশের চারদিকে দেখবেন শুধু সবুজের সমারোহ। যে দিকে চোখ যায় দেখবেন শুধু গাছ আর গাছ। ছোট বড় হাজারো গাছের মেলা বসেছে যেন। আছে হরেক রকম ফলের গাছ। যেমন: আম, জাম, জলপাই, তেতুল, আমলকি, পেয়ারা, বরই, ডুমুর ইত্যাদি।

আরও আছে বিভিন্ন বুনো ফুল গাছ, কাঠ গাছ আর ঔষধি গাছপালা৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আকাশমনি, ইপিল ইপিল, বকুল, শিমুল, জারুল, মহুয়া, নাগেশ্বর, করবি, ভাদি, অর্জুন সহ নাম না জানা অনেক গাছ। আরেকটি সবুজ পরিবেশের আপনাকে মুগ্ধ করবে তা হলো ঝাউবন। ঝাউ বনের মধ্যে একটু ফটোশুট না করলে তো পুরো ট্যুর টাই বৃথা।

২. মিনি চিড়িয়াখানা

পার্কের ভেতরে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি খাচায় বানর, খরগোশ, হরিণ সহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখতে পাবেন৷ তাছাড়া খাঁচার বাইরেও বেশ কয়েকটি বানর ঘুরে বেড়াতে দেখবেন।

তাছাড়াও পার্কের গাছে গাছে কিচিরমিচির করে হরেক রকমের পাখি। সব মিলিয়ে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে বলে আশা করা যায়।

৩. পিকনিক স্পট

পার্কের ভেতরে আছে সুন্দর পিকনিক স্পট। দলবল নিয়ে একটা দিন বনভোজন এর আয়োজন করতে চাইলে এই পার্কে চলে যেতে পারেন। রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন থেকে শুরু করে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা এই স্পটে সম্পন্ন করতে পারবেন।

৪. যমুনা নদীর অপরূপ দৃশ্য

বাংলাদেশের উল্লেখ্যযোগ্য তিনটি নদীর মধ্যে একটি হলো যমুনা নদী। যমুনার তীরের উত্তাল ঢেউ যে কারো মনে দোলা দিতে সক্ষম। আর এই যমুনা নদীর তীরের অপরূপ সৌন্দর্য্য সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক থেকে। পার্কের পেছন দিকে নদীর তীর ঘেষে আছে চমৎকার লেন।

এই রাস্তা ধরে হাটতে হাঁটতে পুরো নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে চাইলেও নদীর কিনারায় গিয়ে উত্তাল ঢেউয়ে গা ভেজাতে পারবেন না। কারণ নিরাপত্তার জন্য তীর ঘেষে তারের সীমানা দিয়ে পথ রোধ করা হয়েছে।

কিন্তু সীমানার এই পাশ থেকে অনায়াসে নদীমাতৃক বাংলাদেশের একটি অপরূপ ভিউ পরিদর্শন করতে পারবেন। তবে বর্ষার সময় নদীর পানি দুকুল ছাপিয়ে একদম পার্কের সীমানায় চলে আসে।
তখন এর সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

৫. বঙ্গবন্ধু সেতুর সবথেকে আকর্ষণীয় ভিউ

বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক এর মূল আকর্ষণ হলো বঙ্গবন্ধু সেতুর একটি অপরূপ সুন্দর ভিউ। এক পলকে যেন পুরো সেতুটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর এই কারণেই যমুনা ইকোপার্ক এর জনপ্রিয়তা এতো বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা যমুনা সেতু দেখতে যায় তারা ইকোপার্ক না ঘুরে ফেরত আসে না।

মূলত বঙ্গবন্ধু সেতুর পাদদেশে এই পার্কটি নির্মাণ করে হয়েছে। তাই পার্কের ওপর দিয়ে একটু পরপর ঝকঝক শব্দ করে ট্রেন ছুটে যায়। এই চমৎকার দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করে নিতে অপেক্ষা করতে থাকে সকল পর্যটক। একই সাথে নদী ও সেতুর এক অসাধারণ ভিউ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য বিমোহিত করে দেবে।

৬. চমৎকার ডেকোরেশন

পার্কের যে দিকে চোখ যাবে শুধু সৌন্দর্যের সমারোহ চোখে পড়বে। প্রবেশ গেইট থেকে সরাসরি পার্কের ভেতরে সুন্দর একটা লেন চলে গেছে। তার দুই পাশে আছে ফুল ও ফল গাছের সারি। মাঝে মাঝেই চোখে পড়বে বসার জন্য বেঞ্চ। আবার কোথাও আছে ছোট কুটির এর মতো বৈঠকখানা।

নদীর কূল ঘেসে যে রাস্তাটি রয়েছে তার একপাশেও আছে বিভিন্ন সবুজ গাছের সারি। আর পার্কের আনাচে কানাচে শোভাবর্ধক ফুলের বাগান তো রয়েছেই। অর্থাৎ পর্যটকদের পুরোটা সময় আনন্দের সাথে কাটানোর জন্য একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্কে।

তাই ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে কিংবা প্রতিষ্ঠানের সকলে একত্রে পিকনিক করতে চাইলে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্কে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

খাওয়ার জন্য পার্কের প্রবেশ গেইটের সামনেই একটি ক্যান্টিন পাবেন৷ এখান থেকে হালকা নাশতা করতে পারবেন। তাছাড়া সিরাজগঞ্জে ফুড ভিলেজ, বসুন্ধরা রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন ভালো মানের হোটেল সহ সাধারণ মানের পাবেন।

আর ঢাকা থেকে এক দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। তাই এখানে রাত্রিযাপন করার কোনো প্রয়োজন পড়বে না বললেই চলে। তবুও যদি থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে সিরাজগঞ্জের মোটামুটি মানের কিছু হোটেলে থাকতে পারবেন। কয়েকটি আবাসিক হোটেলের যোগাযোগ নম্বর দেয়া হলো।

১. হোটেল আরমানি: ১০৭১২- ০৬২০৫১
২. হোটেল উত্তর ভিলা: ০১৭১২-৬২৩১৮০
৩. হোটেল অনিক: ০১৭১২-০৬২০৬১
এসব হটেলে রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা

আশাকরি বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক ভ্রমণ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন। পার্কের সৌন্দর্য ও ভ্রমণ উপযোগীতা সম্পর্কেও হয়তো কোনো প্রশ্ন নেই কারো। ধন্যবাদ।
( পোস্টের ছবিটি প্রতীকী)

Leave a Comment

Scroll to Top