পদ্মা গার্ডেন ভ্রমন গাইড | খরচ, যাওয়ার উপায় এবং অন্যান্য

বাংলাদেশের সবথেকে পরিচ্ছন্ন শহর রাজশাহীতে অবস্থিত ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক। তবে পার্কটি উত্তাল পদ্মা নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত বলে সাধারণ ভাবে এটি পদ্মা গার্ডেন নামেই বহুল পরিচিত। পদ্মা নদীর পরিচ্ছন্ন জলধারা, গাছগাছালি, পাখির কলকাকলি ও অসাধারণ ডেকোরেশন সব মিলিয়ে উপভোগ্য এক পরিবেশ বিদ্যমান জনপ্রিয় এই পার্কে।

বিকালের নরম পরিবেশে পুরো পার্কে যেন হাজারো মানুষের মেলা বসে। কেউ আসে বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, কেউ প্রাত্যহিক ব্যায়াম করতে আবার কেউবা আসে পরিবার পরিজন নিয়ে অবসর কাটাতে। আর উন্মুক্ত ইন্টারনেট সার্ভিস থাকায় এখানে লোকাল ছেলে মেয়েদের ভীর যেন একটু বেশিই দেখা যায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা দিতে এসে কেউ হয়তো পদ্মা গার্ডেন না দেখে ফিরে যায় না। এই পার্কটি এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে কখনোই এখানটা কোলাহলমুক্ত পাবেন না। তাইতো এখানে এলেই এক মুহূর্তে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। বর্ষায় যখন পদ্মা তার আসল রূপ ফিরে পায় তখন যেন পদ্মা গার্ডেনে জনসমাগম আরও বেড়ে যায়।

( পোস্টে ইউজ করা ছবিটি AI দিয়ে বানানো। প্রতীকী ছবি। বাস্তবে পদ্মা গার্ডেন এমন না )

কীভাবে যাবেন পদ্মা গার্ডেন?

রাজশাহী শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ দিকে কিছুটা হাটলেই পদ্মা গার্ডেন এর প্রবেশ গেইট চোখে পড়বে। তাই আপনাকে প্রথমে রাজশাহী পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে একতা ট্রান্সপোর্ট, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন সহ বিভিন্ন এসি ও নন এসি বাসে সরাসরি রাজশাহী যেতে পারবেন।

ক্লাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা৷ তাছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস সহ বিভিন্ন ট্রেনে চেপেও রাজশাহী যেতে পারবেন। শ্রেণি ভেদে ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা।

তাছাড়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ধরে আকাশপথেও খুব সহজে ও কম সময়ে রাজশাহী পৌঁছাতে পারবেন। রাজশাহী পৌঁছে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনে খুব সহজেই পদ্মা গার্ডেন যেতে পারবেন।

পদ্মা গার্ডেন এর উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ

পদ্মা গার্ডেন এর পুরোটা জুড়েই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। একপাশে পদ্মা নদীর মন মাতানো সৌন্দর্য অন্যদিকে পার্কের সবুজ শ্যামল পরিবেশ আর নান্দনিক ডেকোরেশন।

পার্কে ঢোকা মাত্রই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন পদ্মা গার্ডেন এর প্রধান প্রধান আকর্ষন গুলো দেখে নেয়া যাক।

১. পদ্মা নদীর তীর

মূলত পদ্মা নদীর পাড়কে কেন্দ্র করেই পদ্মা গার্ডেন অবস্থিত। নদীর পাড়ে বিকেলের সুন্দর একটি স্মৃতি তৈরি করতে অথবা সকালের স্নিগ্ধ আলোয় পদ্মার এক নতুন রূপ আবিষ্কার করতে চাইলে আপনাকে পদ্মা গার্ডেন চলে যেতে হবে। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে পার্কটি অনেক বড়।

আর পুরোটাই পদ্মা নদীর তীর ঘেসে বিদ্যমান। নদীর পাড়ের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে এর যেন কোনো শেষ নেই। কেথাওবা নদীর তীরে বসে বসে প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য বৈঠকখানার ব্যবস্থা রয়েছে। মোটকথা পদ্মা নদীর সুন্দর একটি ভিউ স্বচক্ষে দেখতে পাবেন পদ্মা গার্ডেন থেকে।

২. কারুকার্য অঙ্কিত ব্রিজ

পদ্মা গার্ডেন এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে দুটো খাল যা পদ্মা নদীর সাথে সংযুক্ত। এই খালের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি নান্দনিক ব্রিজ। এর মধ্যে একটি তুলনামূলক ছোট আরেকটি বড়। তবে দুটো ব্রিজ-ই খুব সুন্দরভাবে রঙিন নকশায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে।

ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে উত্তাল পদ্মার এক অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। নজর চলে যাবে সূদুর ডিঙি নৌকার পানে। সূয্যিমামা যখব ঘুমিয়ে যাওয়ার আয়োজন করবে তখন ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে আপনি অন্যভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।

আর ব্রিজের ওপরে ফটোশুট করলে বেশ চমৎকার একটি ব্যাকগ্রাউন্ড পাওয়া যায়। এর কারন হলো ব্রিজের পিলারগুলোতে অঙ্কিত রঙিন নকশা।

৩. বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইডস

শুধু প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে পারে এমন লোকজন পদ্মা গার্ডেনে ঘুরতে যাবে এমনটা কিন্তু না। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্যও আছে সুব্যবস্থা। পার্কে প্রবেশ করেই দেখতে পাবেন বিভিন্ন রাইডস। নদীর তীর ঘেসেই আছে ঘুর্নায়মান ঝুলন্ত দোলনা।

নদীর ধারে রাস্তার অপর পাশে আছে মিনি ট্রেন ও ঘুর্নায়মান হাতি-ঘোড়া। প্রতিটি রাইড বাচ্চাদের দারুণ আনন্দ দেয়। যে কোনো রাইডে উঠতে চাইলে মাত্র ২০ টাকা মূল্যে টিকেট কাটতে হবে। তাই বাচ্চাদের শৈশবের মুহূর্তগুলো আরও আনন্দঘন করতে পদ্মা গার্ডেন ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।

৪. সবুজ পরিবেশ ও পাখপাখালি

পার্কের নাম-ই যেহেতু পদ্মা গার্ডেন সেখানে সবুজ বাগান থাকবে না তা কী করে হয়। নদীর ধারে যতোটুকু চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে, তবে সেসব গাছ এখনও পুরোপুরি ছায়া বর্ধনকারী গাছে পরিনত হয়নি।

অবশ্য পার্কের শোভা বর্ধনে এই বনায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো রয়েছেই। পাশাপাশি আছে প্রাচীন বেশ কিছু গাছ। এই বৃদ্ধ গাছগুলোর জন্য পার্কের পরিবেশে একটা চমৎকার গাম্ভীর্যতা ও অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আর এরই সুবাদে পার্কে দেখা যায় হরেক রকম পাখিদের মেলা।

বিশেষ করে শালিকের ঝাঁক তো একটু পর পরই দেখতে পাওয়া যায়। যদি পার্কের এই সবুজ শীতল পরিবেশ ও পাখির কলধ্বনি খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে চান তাহলে খুব ভোরে পদ্মা গার্ডেন চলে যাবেন।

৫. নৌকা ভ্রমণ

পদ্মা গার্ডেন ঘুরতে যাবেন আর নৌকা নিয়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াবেন না এ আবার হয় নাকি! নতীর তীর ঘেষে অনেক ছোট বড় নৌকা বাঁধা থাকে। আপনি চাইলে যে কোনো একটি নৌকা ভাড়া করে পদ্মা নদীর বুকে কিছুটা সময় ঘুরতে পারবেন। সময় চুক্তিতে আপনি এখানে নৌকা ভাড়া করতে পারবেন।

অন্যান্য নদীর থেকে পদ্মা নদীতে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা একটু বেশিই রোমাঞ্চকর। কেননা পদ্মায় ঢেউয়ের বেগ বেশি তাই নৌকার দুলুনি টাও একটু বেশিই অনুভব করতে পারবেন। তবে যারা সাতার জানেন না বা পানিতে ভয় পান তারা নৌকা ভ্রমনের প্লান বাদ দিতে পারেন।

৬. স্ট্রিট ফুড

রাজশাহীতে গিয়ে সবথেকে ভালো স্ট্রিট ফুড এর সন্ধান করলে আপনাকে অবশ্যই পদ্মা গার্ডেন চলে যেতে হবে। তবে অবশ্যই বিকেলের দিকে যাবেন। পার্কের পুরোটা জুড়েই আছে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুড এর দোকান। কফি শপ ও চাইনিজ কোর্ট তো রয়েছেই।

চটপটি, ফুচকা, হালিম, আইসক্রিম, আচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের লোকাল ফুড এখানে পেয়ে যাবেন। নদীর ধারে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে এইসকল ছোটখাটো দোকান গুলো দাড়িয়ে আছে। দেখলেই মন চাইবে সেখানে বসে কিছু একটা খেতে৷

কোনো জরুরি কাজ হোক কিংবা ভ্রমনের উদ্যেশ্যেই হোক, রাজশাহী গেলে অবশ্যই একবার পদ্মা গার্ডেন থেকে ঘুরে আসবেন৷ এটি আপনার রাজশাহী ভ্রমণে আরও একটু নতুন মাত্রা যোগ করবে।

আর সবথেকে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো পদ্মা গার্ডেন সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ এখানে প্রবেশর জন্য কোনো অনুমতি বা এন্ট্রি ফি লাগবে না।

৭. পদ্মার বালুচর

সম্প্রতি পদ্মা গার্ডেন এর ভেতর দিয়ে একটি সরু বালুর রাস্তা তৈরি হয়েছে যা মিলিত হয়েছে একটি ছোট চরের সাথে। অনেক সময় পার্কের সাথে লাগোয়া নদীর যে অংশটুকু সেখানে কচুরিপানা জমা হয়ে থাকে৷ ফলে পার্ক থেকে খুব কম অংশে পদ্মার আসল রূপ ধরা পরে।

এই করম অভিজ্ঞতা আপনার হলে আপনি চলে যেতে পারেন পদ্মা গার্ডেন এর সাথে সংযুক্ত পদ্মার ছেট এই বালুচরে। এই চর থেকে পুরো নদীর দৃশ্যটি খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন৷ তবে পার্ক সংলগ্ন নদীর পানি পরিষ্কার থাকলে চরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।

কোনো জরুরি কাজ হোক কিংবা ভ্রমনের উদ্যেশ্যেই হোক, রাজশাহী গেলে অবশ্যই একবার পদ্মা গার্ডেন থেকে ঘুরে আসবেন৷ এটি আপনার রাজশাহী ভ্রমণে আরও একটু নতুন মাত্রা যোগ করবে। আর সবথেকে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো পদ্মা গার্ডেন সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ এখানে প্রবেশর জন্য কোনো অনুমতি বা এন্ট্রি ফি লাগবে না।

Leave a Comment

Scroll to Top