গোল্ডেন শিশু পার্ক ভ্রমণ গাইড | টিকিটের দাম, যাওয়ার উপায়, রাইড সমূহ

ফেনী জেলার একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র গোল্ডেন শিশু পার্ক। পার্কটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তখন এটি খুবই সাধারণ মানের একটি পার্ক ছিলো৷ ধীরে ধীরে গোল্ডেন শিশু পার্ক এর ডেকোরেশন সুন্দর করা হয় ও রাইডের সংখ্যা-ও বাড়ানো হয়।

বর্তমানে ফেনীর বাসিন্দাদের জন্য এটি বিনোদনের প্রধান একটি ক্ষেত্র বলে বিবেচিত হয়। শুধু ফেনীর বাসিন্দা নয় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসে গোল্ডেন শিশু পার্ক ভ্রমণে। পার্কের নান্দনিক ডেকোরেশন, রোমাঞ্চকর রাইড, সবুজ পরিবেশ আপনাকে মুহুর্তেই মুগ্ধ করে ফেলবে।

ব্যক্তিগত ভ্রমণ ছাড়াও যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য পিকনিক এর আয়োজন করতে চাইলেও সব ধরনের সুব্যবস্থা পাবেন। ছোট থেকে বড় সবার জন্যই এটি একটি উপযুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। তাই একটা দিন আনন্দঘন মুহূর্তে কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন গোল্ডেন শিশু পার্ক। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পার্কে প্রবেশের অনুমতি থাকে।

কীভাবে যাবেন গোল্ডেন শিশু পার্ক?

ফেনীর মহীপাল এর বিখ্যাত বিজয় সিংহ দিঘির পূর্ব দিকে গোল্ডেন শিশু পার্ক অবস্থিত। তাই দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমেই চলে যেতে হবে ফেনী শহরে। ঢাকা থেকে সড়কপথে একমাত্র ‘স্টার লাই’ন বাসে ফেনী যেতে পারবেন। স্টার লাইন এর বেশ কয়েকটি বাস দিনের বিভিন্ন সময় ঢাকা থেকে ফেনীর উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি ও নন এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

তাছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মহানগর প্রভাতী, মহানগর এক্সপ্রেস অথবা তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে সরাসরি ফেনী স্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন। ক্লাস ভেদে ভাড়া ২৬৫ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। ফেনী পৌঁছে রেলওয়ে স্টেশন থেকে অথবা ট্রাংক রোড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি গোল্ডেন শিশু পার্ক এর প্রবেশ গেইটে পৌঁছাতে পারবেন।

গোল্ডেন শিশু পার্ক এর আকর্ষণ সমূহ :

গোল্ডেন শিশুপার্ক এর প্রবেশ গেইট থেকে শুরু করে এর ভেতরের প্রতিটি স্পট বেশ সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে। তাই পার্কের সামনে পৌঁছানোর সাথে সাথেই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। পার্কের সামনের দেয়ালের পুরো অংশ জুড়েই দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম করা আছে। চাইলে পার্কে প্রবেশ করার আগেই এখানে কিছুক্ষণ ফটোসেশন পর্ব সেরে নিতে পারেন।

তারপর গেইটের পাশের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করবেন। পার্কের ভেতরে গেলে যতোটা মুগ্ধ হবেন তার থেকেও বেশি বিস্মিত হবেন। কারণ যেদিকে চোখ যাবে দেখবেন শুধু রোমাঞ্চকর সব রাইডস। দেখলেই আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।

পার্কের ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রথমে চোখে পড়বে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। পার্কের নামানুসারে মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে এবং পেছন দিকে চমৎকার ডিজাইনে লেখা হয়েছে ‘গোল্ডেন শিশু পার্ক’। আপনার সাথে যদি কোনো বাচ্চাদের নিয়ে যান তাহলে তাদের মঞ্চে উঠিয়ে দিলে খুব এনজয় করবে। মঞ্চের ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে খুব সুন্দর একটি ব্যাকগ্রাউন্ড পাবেন। আর পিকনিক গ্রুপ নিয়ে গেলে এই মঞ্চে যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন।

একটু সামনের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন ‘সুইং চেয়ার’ নামক বেশ উপভোগ্য একটি রাইড। ওপরে ছাতার আদলে ডিজাইন করা হয়েছে আর তার সাথে জোড়া জোড়া দোলনা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। চলন্ত অবস্থায় দোলনা গুলো ঘুরতে থাকে। তার পাশেই আছে একটি সুউচ্চ নাগরদোলা। এটা কিন্তু যেমন তেমন নাগরদোলা না। নাগরদোলার উচ্চতা এতো বেশি যে এতে চড়লে আপনার বুকের ধুকপুকানি আপনি নিজেই টের পাবেন। আর নাগরদোলার ওপর থেকে এক নজরে পুরো পার্কটি দেখতে পারবেন।

বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য আছে একটি গোল্ডেন ট্রেন। তবে শুধু বাচ্চা নয়, যুবক যুবতীরাও ট্রেনে উঠে ঝকঝক করে পুরো পার্ক ঘুরে বেড়ায়। ট্রেন ছুটে চলা রাস্তার পাশের ডেকোরেশন দেখতে দেখতে কখন যে ট্রেনের গতি আবার থেমে যাবে তা আপনি টেরই পাবেন না। আরও আছে রেসিং কার। এটা শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্য। নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে ছোট ছোট জিপ নিয়ে আপনার শোনামনি ঘুরে বেড়াতে পারবে।

তা-ও আবার সে নিজে ড্রাইভিং করবে। শিশুদের কাছে এই রাইড টি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাচ্চাদের জন্য আরও একটি আকর্ষনীয় রাইড হলো মেরি গো রাউন্ড। ছোট ছেট হাতি, ঘোড়ার পিঠে উঠে ঘুরতে থাকবে কিছুটা সময়। এতেই যেন তাদের আনন্দের কোনো সীমা থাকে না।

এরপরে আসি পার্কের সবথেকে রোমাঞ্চকর দুইটি রাইড সম্পর্কে। একটি হলো হিউম্যান আরেকটি ফ্রিজবী। অবশ্যই শারিরীক ও মানসিক ভাবে শক্ত না হলে এই সকল রাইডে উঠবেন না। তবে যারা খুব বেশি এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এসব রাইড ভ্রমণে আলাদা মাত্রা নিয়ে আসবে। রাইড চালু হওয়ার সাথে সাথেই সিটগুলো ঝড়ের গতিতে ঘুরতে থাকবে আবার কখনও পুরোপুরি উল্টে যাবে। আর এসকল রাইডে বাচ্চাদের ওঠানোর দুঃসাহস করা তো একদমই উচিত হবে না।



গোল্ডেন ট্রেন এর পাশ দিয়ে চলে গেছে সুন্দর একটি লেন। লেনের দুই পাশে বেড করে বিভিন্ন শোভাবর্ধক ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। রাস্তার পাশে পাশে বসার মতো বেঞ্চ রয়েছে আবার কোথাও আছে বৈঠকখানা। এখানে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে অথবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে অনেকটা সময় রিল্যাক্সে আড্ডা দিতে পারবেন৷ আর এই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাবেন একটি মাঝারি আকৃতির লেক। লেকের পানিতে প্যাডেল বোট নিয়ে ভেসে বেড়াতে পারবেন। তবে যারা সাতার জানেন না অথবা পানিতে ভয় পান তাদের জন্য এটিয়ে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। লেকের রেলিং ধরে কিছুটা সময় অবশ্য কাটাতে পারবেন।

এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য আছে আলাদা একটি কিডস জোন। এখানে কোনো প্রকার টিকেট ছাড়াই বাচ্চারা স্লিপার, দোলনা ইত্যাদি ছোটখাটো রাইডে খেলাধুলা করতে পারবে। আর পার্কের আশেপাশে আছে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির ভাষ্কর্য। এসকল ভাষ্কর্য দেখলে এতোটাই জীবন্ত মনে হয় যে বাচ্চারা একদমই খুশি হয়ে যায়। কোথাও ক্যাঙারু, কোথাও উটপাখি, কোথাও বাঘ আবার কোথাওবা জিরাফের মতো বিশাল আকৃতির ভাষ্কর্য নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে আছে।

ওহ আরেকটা বিষয় তো বলা-ই হয়নি। পার্কে ঢোকার সাথে সাথেই আপনাদের চোখ পড়বে মিনি চিড়িয়াখানার দিকে। পার্কের একপাশে ছোট ছোট কয়েকটি খাচায় বিভিন্ন প্রাণী দেখতে পাবেন। আছে খরগোশ, বানর ঘোড়া সহ ছোট ছোট আরও কিছু প্রাণী। তাহলে একই সাথে পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা দুটোই ঘুরে দেখা হলো।
মোটকথা বাচ্চা থেকে বড় সবার জন্যই বিনোদনের একটি পূর্নাঙ্গ ব্যবস্থা করা হয়েছে গোল্ডেন শিশুপার্কে। তাই ছুটির দিনটি পরিবারের সাথে একটু স্পেশাল ভাবে কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন ফেনীর গোল্ডেন শিশু পার্ক।

গোল্ডেন শিশু পার্ক ভ্রমণ খরচ:

গোল্ডেন শিশু পার্কে প্রবেশের জন্য টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। তবে ২ বছর থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুদের জন্য টিকেট মূল্য ৩০ টাকা। ২ বছরের নিচে হলে বাচ্চার কোনো টিকেট লাগবে না। রেসিং কার, হিউম্যান, ফ্রিজবী এই তিনটি রাইডের প্রতিটির টিকেট মূল্য ১০০ টাকা করে। আর বাকি যেসকল রাইড আছে সব গুলোর টিকেট মূল্য ৫০ টাকা করে। যেমন: ট্রেন, নাগোরদোলা, সুইং চেয়ার, মেরি গো রাউন্ড, প্যাডেল বোট। প্রতিটি রাইড এর জন্য আলাদা আলাদা টিকেট কাটতে হবে। তবে এই টিকেট মূল্য পার্ক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে গেলে এক দিনের মধ্যেই গোল্ডেন শিশু পার্ক সহ ফেনীর সবগুলো স্পষ্ট ঘুরে দেখে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে রাতে থাকার কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তবে থাকতে চাইলে ফেনী শহরের যে কোনো একটি আবাসিক হোটেলে মোটামুটি বাজেটের মধ্যে রুম পেয়ে যাবেন।

খাওয়ার জন্য পার্কের ভেতরেই মোটামুটি ভালো মানের একটি ক্যান্টিন পাবেন। এখান থেকে খাবার কিনে নিতে পারেন। ক্যানটিন এর ডাইনিং ব্যবস্থা বেশ নান্দনিক। তাই পিকনিক গ্রুপ নিয়ে আসলে আগে থেকে ক্যান্টিনে যে কোনো খাবার অর্ডার করে রাখতে পারেন। তাছাড়া হালকা নাশতা করতে চাইলে পার্কের মধ্যেই পাবেন ফুচকা ও চটপটির দোকান। গোল্ডেন চটপটি এন্ড ফুচকা হাউজের ফুচকা না খেয়ে একদমই আসবেন না। তাছাড়া পার্কের বাইরে বিভিন্ন খাবার হোটেল, কাবাব ঘর ও রেস্টুরেন্ট পাবেন।

পার্কের পরিবেশ:

পুরো পার্কটি সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত। এছাড়া কোনো বখাটে লোকজন পার্কের মধ্যে আড্ডা দেয়ার সুযোগ পায় না। আর অন্যান্য পার্কে যেমন অসামাজিক কার্যকলাপ দেখা যায়, এই পার্কে এমন কোনো সুযোগ নেই। এখানে যারা আসে মোটামুটি সকালেই তাদের পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে সুন্দর একটি ছুটির দিন কাটাতে আসে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারবেন। চাইলে বিজয় সিংহ দিঘির পাড় থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন।

পোস্টের সকল ছবি গোল্ডেন-শিশু-পার্ক এর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। ছবির মূল ক্রেডিট তাদের

Leave a Comment

Scroll to Top