ছুটি রিসোর্ট ভ্রমণ গাইড | প্যাকেজ সমূহ, খরচ, যোগাযোগ

অবস্থানগত দিক থেকে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনে ছুটি রিসোর্ট গাজীপুরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে ৫৪ বিঘা জমির ওপর খুব চমৎকার ডেকোরেশন নিয়ে অবস্থান করছে এই রিসোর্টটি।

গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল রাজবাড়ী ও ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের একদমই সন্নিকটে অবস্থিত বলে ছুটি রিসোর্টে অতিথির আগমন তুলনামূলক একটু বেশি। ২০১২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সুনামের সাথে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ অতিথিদের যথাযথ সার্ভিস দিয়ে আসছে।

গাজীপুরের সেই বিখ্যাত জঙ্গলেের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের একখণ্ড বাস্তব চিত্র স্বচক্ষে উপভোগ করতে চাইলে একবার ঘুরে আসতে পারেন ছুটি রিসোর্ট থেকে।ছুটি রিসোর্ট এর যাবতীয় সুযোগ সুবিধা, খরচ ও যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে সকল তথ্য নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।

ছুটি রিসোর্ট এর সুযোগ সুবিধা

আপনার ছুটির দিনকে পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ্য করার সকল উপকরণ ছুটি রিসোর্টে পাবেন। নির্জন প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ পর পর পাখির কিচির মিচির শব্দ, শিয়ালের হাঁক আর ঝিঝির ডাক আপনাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে। রিসোর্টের ঠিক মাঝ বরাবর একটি চমৎকার সুইমিং পুল রয়েছে।

আছে কিডস জোন, সুবিশাল খেলার মাঠ, কনফারেন্স হল, লাক্সারিয়াস ভিলা ও কটেজ, পার্ক, ফাইভ স্টার মানের রেস্টুরেন্ট, বারবিকিউ করার সুযোগ, ক্যাম্পিং এর সুযোগ, ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা, সাইকেলিং, ২ টি সুসজ্জিত পিকনিক স্পট, ঘোড়ার পিঠে ওঠার সুযোগ সহ আরও অনেক কিছু। রিসোর্ট এর মধ্যে ৩ টি লেক রয়েছে যেখানে বোটিং ও ফিশিং এর সুবিধা রয়েছে।

লেকের পাশে চমৎকার শান বাধানো ঘাটে বসে মাছ ধরতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে এক্সট্রা চার্জ দিয়ে এই সুবিধা গ্রহণ করতে হবে।

এক্সট্রা সুবিধা হিসেবে পাবেন ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস, হাই স্পিড ওয়াইফাই কানেকশন, পার্কিং ব্যবস্থা, আনলিমিটেড চা/কফি ও মিনারেল ওয়াটার। পার্কের ভেতরের চমৎকার লেনে সাইকেলিং করতে পারবেন৷ লেনের দুই পাশে দেখতে পাবেন দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ। আছে শীতকালীন পিঠার ব্যবস্থা।

তবে সবথেকে মজার বিষয় হলো গাজীপুরের জঙ্গলে জোছনা বিলাস করার মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন এখান থেকে। কেননা ভরা পূর্নিমায় রিসোর্ট এর সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়। যার ফলে প্রকৃতির মাঝে চাঁদের জোছনার অকৃত্রিম এক সৌন্দর্য উপভোগ উপভোগ করতে পারবেন।

ছুটি রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ

ছুটি রিসোর্ট ভ্রমণ করতে চাইলে আপনাকে এখানে রুম বুকিং করে থাকতে হবে অথবা যে কোনো সময়ে চলমান বিভিন্ন প্যাকেজ অফার ধরতে হবে। রুম ভেদে ভাড়ায় তারতম্য রয়েছে। নিচে প্রতিটি রুমের ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হলো

১. ঐতিহ্য কটেজ

এই কটেজ ভাড়া করলে একটি ডবল বেড সহ লাক্সারিয়াস রুমে ২ জন থাকতে পারবেন। ভাড়া ৭৫০০ টাকা।

২. ফ্যামিলি কটেজ

এক্ষেত্রে একটি কিং সাইজ বেড সহ একটি লাক্সারিয়াস রুম পাবেন যেখানে ৪ জন থাকতে পারবেন। ভাড়া ১৮,০০০ টাকা

৩. ভাওয়াল কটেজ

এই কটেজটি বাইরে থেকে দেখতে একদমই পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী মনে হয় ৷ কিন্তু ভেতরের ডেকোরেশন একদমই লাক্সারিয়াস। ভাওয়াল কটেজে ২ জন থাকতে পারবেন এবং ভাড়া ১৩,০০০ টাকা।

৪. উডেন কটেজ

এটি কাঠের তৈরি একটি টং ঘরের মতো যার ফ্লোরটাও কাঠের। উঁচু কটেজে ওঠার জন্য যে সিড়ি রয়েছে, সেটাও কাঠের। বাইরে থেকে একদম নড়বড়ে থিমের হলেও ভেতরের ডেকোরেশন বেশ আধুনিক। এই কটেজে ৮০০০ টাকা ভাড়ায় ২ জন থাকতে পারবেন৷

৫. ডিলাক্স টুইন

এক্ষেত্রে টুইন খাট সহ একটি কটেজ রুম পাবেন। ৭৫০০ টাকা ভাড়ায় ২ জন থাকতে পারবেন৷

৬. প্রিমিয়াম টুইন

ডিলাক্স টুইন আর প্রিমিয়াম টুইন অনেকটা একই রকম কিন্তু প্রিমিয়াম টুইন রুমের সাথে একটি ঝুল বাড়ান্দা রয়েছে। যেখান থেকে সবুজ পরিবেশের ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। প্রিমিয়াম টুইনে ৮০০০ টাকা ভাড়ায় ২ জন থাকতে পারবেন।

৭. প্লাটিনাম কিং

এক্ষেত্রে ডবল বেড সহ সোফা, সেলফ ও অন্যান্য আসবাব সহ রুমের সাথে লাগোয়া একটি বারান্দা থাকবে। ভাড়া ৯০০০ টাকা এবং থাকতে পারবেন ২ জন।

৮. এক্সিকিউটিভ সুইট

একদমই অত্যাধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ রুম যেখানে ডবল বেড ও প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম সহ ২ জন থাকার সুযোগ পাবেন৷ ভাড়া ১৪,০০০ টাকা।

৯. রয়্যাল সুইট

ছুটি রিসোর্ট এর সবথেকে লাক্সারিয়াস সুইট এটি। যেখানে বেড, ডাইনিং, ড্রয়িং সহ ঝুল বারান্দা রয়েছে। এখানে ১৮,০০০ টাকায় দুইজন থাকতে পারবেন।

১০. ডুপ্লেক্স ভিলা

ডুপ্লেক্স ভিলার একটি রুম সহ ডবল বেড পাবেন। যেখানে ৮০০০ কাটা ভাড়ায় ২ জন থাকতে পারবেন।

১১. প্রিমিয়াম ডুপ্লেক্স ভিলা

প্রিমিয়াম ডুপ্লেক্স ভিলায় ১০,০০০ টাকা ভাড়ায় ২ জন থাকতে পারবেন।

প্রতিটি রুমের সাথে যে সকল সুযোগ সুবিধা থাকব
সকালের নাশতা, সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ, কিডস জোন, মাঠ সহ পুরো পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ, জিম ফ্যাসিলিটি, আনলিমিটেড চা/কফি, মিনারেল ওয়াটার, ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস, হাই স্পিড ওয়াইফাই।

এছাড়া রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে প্যাকেজ অফার এর আয়োজন করে। বর্তমানে চলমান কয়েকটি প্যাকেজ সম্পর্কে জেনে নিন।

কমন ডে আউট প্যাকেজ-
এই অফারটি সবার জন্য প্রযোজ্য। প্যাকেজ মূল্য ২২০০ টাকা। প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, রাতে বারবিকিউ করার সুযোগ। আরও থাকবে সুইমিং পুল, মাঠ ও ক্যাম্প ফায়ার এর ব্যবস্থা।

স্টুডেন্ট ডে লং প্যাকেজ

এই প্যাকেজ অফারটি শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য। এই অফারটি নিতে চাইলে আপনাকে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখাতে হবে। প্যাকেজ মূল্য ১৫০০ টাকা। প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও বিকালের নাশতা। আরও থাকবে সুইমিং পুল, মাঠ ও বোটিং এর সুযোগ।

স্টুডেন্ট নাইট স্টে প্যাকেজ

এই প্যাকেজটিও শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য প্রযোজ্য। আর অবশ্যই এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখাতে হবে। প্যাকেজ মূল্য ২৫০০ টাকা। প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিকালের নাশতা, রাতে বারবিকিউ পার্টি, সকালের নাশতা, ক্যাম্প ফায়ার, বাগানে তাবু খাটিয়ে থাকার সুযোগ, সুইমিং পুল, মাঠ ও বোটিং এর সুযোগ।

বি. দ্র: অফার মূল্য ও এর অন্তর্ভুক্ত সুযোগ সুবিধা পরিবর্তনশীল। তাই ভ্রমণ প্লান করার আগে চলমান প্যাকেজ সম্পর্কে জেনে নিন। আর পিকনিক স্পট ভাড়া করলে সে বিষয়ে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সকল সুযোগ সুবিধা ও খরচের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিতে হবে।

আরও কিছু এক্সট্রা খরচ-
যারা প্যাকেজ অফারের বাইরে রুম নিয়ে থাকবেন তাদের দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য এক্সট্রা রেস্টুরেন্ট বিল দিতে হবে।

  • ফিশিং এর জন্য কুপন মূল্য – ২০০ টাকা।
  • ঘোড়ার পিঠে উঠলে প্রতি এক রাউন্ড – ৫০ টাকা।
  • সাইকেলিং এর জন্য ফি – ১০০ টাকা।

যোগাযোগ:

  • ঠিকানা- সুকুন্দি গ্রাম, আমতলী রাজার, জয়দেবপুর, গাজীপুর।
  • মোবাইল- ০১৯৫১-৫৩৭৭৭৭ বা, ০১৭৭৭-১১৪৪৮৮
  • ওয়েবসাইট- www.chutiresort.com
  • ইমেইল- reservation@chutibd.com

খাওয়ার ব্যবস্থা

প্যাকেজ অফারে ঘুরতে গেলে তো খাওয়া নিয়ে এক্সট্রা কোনো চিন্তা করতে হবে না। তবে রেগুলার মূল্যে রুম ভাড়া নিলে এক্সট্রা খরচে রিসোর্ট এর রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন৷ বুফে খাওয়ার সুযোগ সহ রয়েছে বারবিকিউ করার সুযোগ। তাছাড়া সকালের খাবারে মেনুতে থাকে চালের রুটি, চিতই পিঠা, ডাল ও সবজি। তাছাড়া সব ধরনের শীতকালীন পিঠা পুলির আয়োজন তো থাকেই। অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলেও সকল খাবারের অর্ডার করতে পারবেন৷ এছাড়াও আছে সুসজ্জিত ডাইনিং প্লেস।

ছুটি রিসোর্ট ভ্রমণ যাওয়ার উপায়

ছুটি রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে পৌঁছাতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে শিববাড়ি মোড় দিয়ে ভাওয়াল রাজবাড়ীর সামনে থেকে ৩ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যেতে পারবেন ছুটি রিসোর্টে।

আর লোকাল টান্সপোর্টে যেতে চাইলে ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে গাজীপুরের বাসে চেপে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে হবে। চৌরাস্তা নেমে পূর্ব দিকের রোড থেকে লোকাল অটো নিয়ে চলে যাবেন জয়দেবপুর রেলগেট। সেখান থেকে আরেকটি রিকশা বা অটো নিয়ে ভাওয়াল রাজবাড়ীর সামনে চলে যেতে হবে। ভাওয়াল রাজবাড়ীর মাঠের পাশে সামনে থেকে ছুটি রিসোর্ট যাওয়ার জন্য রিজার্ভ সিএনজি পাবেন।

রেলপথে যেতে চাইলে ঢাকার যে কোনো স্টশন থেকে ট্রেনধরে জয়দেবপুর স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে ভাওয়াল রাজবাড়ী হয়ে সিএনজি নিয়ে ছুটি রিসোর্ট যেতে পারবেন। যাওয়ার পথে ভাওয়াল রাজবাড়ী ঘুরে দেখে যেতে পারেন।

গাজীপুরের অবকাশ যাপনের জন্য ছুটি রিসোর্ট সত্যিই একটি চমৎকার জায়গা। যারা প্রকৃতি ভালোবাসে কিংবা প্রকৃতির সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে চায় তাদের কাছে কোলাহলমুক্ত এই রিসোর্ট বেশি ভালো লাগবে। ছুটি রিসোর্টে একটা দিন কাটিয়ে আসার আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ।
– ছবিঃ ছুটি রিসোর্ট পেজ

Leave a Comment

Scroll to Top