চট্টগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থান সমূহ ভ্রমন গাইড। কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

 চট্টগ্রাম বিভাগটি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত। পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার হওয়ায় একে প্রাচ্যের রাণী বলা হয়ে থাকে। বিশাল এই শহরে ঘুরতে যাওয়ার আগে চট্টগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। কেননা চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে বহু সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান। ধারণা না থাকলে আপনি হয়তো বহু স্পট মিস করে ফেলতে পারেন। 

প্রতিবছর দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক চট্টগ্রামে ঘুরতে আসেন। চট্টগ্রামের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রায়ই পর্যটকের আনাগোনা থাকে। 

চট্টগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থান সমূহ

চট্টগ্রানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো –

  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত 
  • আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ
  • বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
  • সাহেব বিবি মসজিদ
  • ওয়ালি খান মসজিদ
  • মসজিদ-ই-সিরাজ উদ- দৌলা 
  • চন্দ্রনাথ পাহাড়  এবং মন্দির
  • মহামায়া লেক
  • সীতাকুন্ড ইকো পার্ক 
  • নন্দীরহাট জমিদার বাড়ি
  • গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
  • খেজুরতলা বীচ
  • বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
  • কুমিরা ঘাট, সীতাকুণ্ড 
  • লেকভিউ আইল্যান্ড 
  • চেরাগি পাহাড়
  • ছাগলকান্দা ঝর্ণা 
  • খৈয়া ছরা ঝরনা
  • ঝরঝরি ঝর্ণা 
  • কমলদহ ঝর্ণা 
  • নজরুল স্কয়ার
  • কুমারীকুন্ড
  • জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর
  • মহামুনি বৌদ্ধ বিহার
  • রাংগুনিয়া কোদালা চা বাগান
  • কালুরঘাট ব্রীজ
  • চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি
  • বাটালি হিল
  • চালন্দা গিরিপথ 
  • চুনতি বন্যপ্রাণী  অভয়ারন্য
  • পারকি সমুদ্র সৈকত
  • বাওয়াছড়া লেক
  • নাপিত্তছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল
  • ফয়েজ লেক
  • ভাটিয়ারী লেক
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  • বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত 
  • লালদিঘী
  • চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
  • প্রজাপতি পার্ক
  • হাজারিখিল অভ্যারন্য
  • বাঁশখালী ইকোপার্ক
  • সোনাইছড়ি ট্রেইল
  • জাম্বুরি পার্ক
  • সহস্রধরা ঝর্ণা 
  • সুপ্তধারা ঝর্ণা 
  • স্বাধীনতা কমপ্লেক্স
  • রেলওয়ে জাদুঘর
  • বোয়ালিয়া ট্রেইল
  • ক্যাফে ২৪ পার্ক
  • হরিনমারা হাঁটুভাংগা ট্রেইল
  • শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড
  • ডিসি হল
  • হালদা নদী
  • মন্দাকিনী শিব মন্দির
  • সি আর বি শিরীষতলা
  • সন্দীপ
hotel booking

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক, চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। সেইসাথে ঢাকা থেকে বিমান বা সড়ক পথে কিভাবে চট্রগ্রামের এসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাবেন, কোথায় থাকবেন সেসব বৃত্তান্ত জেনে নেই। 

১) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত (Patenga Sea Beach) 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত (Patenga Sea Beach) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত এবং চট্রগ্রামের সবচেয়ে সুন্দর দর্শনীয় স্থান।  চট্টগ্রাম শহর থেকে এই সৈকতের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার। শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটকদের জন্য এই স্থানে যাওয়া অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। সৈকতটির দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। এই স্থানটিকে ঘিরে আরো কিছু প্রকল্প করা হচ্ছে যা সৈকতকে করে তুলবে আরো আধুনিক এবং নান্দনিক। 

পতেঙ্গা সী বিচে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তর অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। কর্ণফুলী নদী এবং সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিকেল, সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় সময়টা উপভোগ্য। এই জায়গায় আপনি স্পীড বোট(Speed boat), সী বাইক (Sea bike) এবং ঘোড়ায় করে ঘুরতে পারবেন। সী বাইকের রাইড ১০০ টাকা এবং ঘোড়ায় রাইড ৫০-১০০ টাকা করে হয়ে থাকে (সীজন এবং অফ সীজনে মুল্য কম বেশি হতে পারে)।

এখানকার স্থানীয় পন্য কেনাকাটা করতে পারবেন বার্মিজ মার্কেটে। অনেক রকমের স্ট্রিট ফুড ও পাবেন এখানে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি আরো কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে;

  • শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর 
  • বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি
  • প্রজাপতি পার্ক

এইসব গুলো জায়গা কাছাকাছি হওয়ায় চাইলে একসাথে ঘুরে দেখতে পারবেন সবকিছুই।সুন্দর একটি ছুটি কাটানোর জন্য পতেংগা সমুদ্র সৈকত বেছে নিতে পারেন।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উপায়- 

পতেঙ্গা যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রাম আসতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে বা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়। তাই আপনাকে আগে চট্টগ্রামে আসতেই হবে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য আপনি সড়ক, রেল বা আকাশপথ যে কোনো মাধ্যমেই আসতে পারবেন।

ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ায়  জন্য বেশ কয়েকটি বাস পাবেন। গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, টি আর ট্রাভেলস, এস আলম, মডার্ন লাইন ইত্যাদি পরিবহনের এসি, নন এসি বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসগুলোয় প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ – ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে বেশ কিছু ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। কমলাপুর রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে যাত্রা করতে পারেন। সোনার বাংলা, তৃর্ণা-নিশীথা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী অথবা চট্টগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন। 

এছাড়াও চাইলে বিমানে করে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেতে পারেন।

দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই চট্টগ্রামে যাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। বাস কিংবা রেলযোগে আপনি চট্টগ্রামে এসে সেখান থেকে পতেঙ্গা বীচে যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা যাওয়ার উপায়: 

চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার দক্ষিনে। চট্টগ্রাম শহর থেকে নিজস্ব পরিবহন কিংবা সিএনজি বা লোকাল বাসে করে পতেঙ্গা যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেংগা যেতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘন্টা। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। 

নিউমার্কেট, রেল স্টেশন রোড, লালখান বাজার মোড়, বহদ্দারহাট জিইসি মোড় অথবা চক বাজার মোড় থেকে বাস পেয়ে যাবেন। 

চাইলে বাসে করেও যেতে পারেন। পতেংগা যাওয়ার পথে রাস্তার দুইধারে দেখতে পাবেন সারি সারি ঝাউগাছ যা এই পথকে করে তুলেছে আরো সুন্দর।

পতেংগা বীচে খাওয়া দাওয়া:

পতেঙ্গা সী বিচেই বেশ কিছু স্ট্রিট ফুডের দোকান পেয়ে যাবেন। এসব দোকানে ভাজাপোড়া আইটেম, কাকড়া ভাজা, সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ ভাজাসহ ফাস্টফুড আইটেম ও পাবেন। আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরে। আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে চাইলে “মেজবান হাইলে আইয়্যুন” রেস্তোরায় যেতে পারেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে আরো অনেক রেস্টুরেন্ট বা খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন। এর মধ্য বারকোড ক্যাফে, ক্যাফে ৮৮, সেভেন ডেইজ, ধাবা, গলফ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোয়েল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ অন্যতম।

থাকার হোটেল বা রিসোর্ট:

পতেঙ্গায় থাকার মত তেমন একটা সুবিধা নেই। তাই রাতে থাকার জন্য চট্টগ্রাম শহরই উত্তম। তবে সৈকতের কাছে থাকতে হলে বাটারফ্লাই পার্ক রিসোর্টে থাকতে পারেন, এখানে খরচ পড়বে প্রায় ৪-৭ হাজার টাকা। আর কম খরচে থাকতে হলে CEPZ এলাকায় কোন মাঝারি মানের হোটেলে থাকতে হবে।

কিন্তু আপনি যদি চট্টগ্রাম শহরে আসেন তবে এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল পাবেন। আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী যে কোনো হোটেলে থাকতে পারবেন।

চট্টগ্রাম শহরের কিছু হোটেলে থাকার সম্ভাব্য খরচ-

  • প্যারামাউন্ট হোটেল – ভাড়া ৮০০ – ১৮০০ টাকা
  • হোটেল অবকাশ – ভাড়া ১২০০- ২০০০ টাকা
  •  হোটেল ল্যান্ডমার্ক (আগ্রাবাদ)- ২৫০০ টাকা থেকে শুরু।

আর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আপনাকে থাকতে গেলে এক রাতের খরচই পড়বে ১৮০০০ টাকা।

২) আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ (Anderkilla Shahi Jame Masjid) 

আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ মোঘল স্থাপত্যে নির্মিত একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ১৬৬৭ সালে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদটির সাথে মোঘলদের বিজয়ের আনন্দ জড়িত। এই কেল্লায় মগ এবং পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো।

Image And Credit: Anderkilla Shahi Jame Mosque ( Fb page)

১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ’র ছেলে উমেদ খাঁ আন্দরকিল্লা জয় করেন। চট্টগ্রাম বিজয়ের এই স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ “আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ” নির্মান করেন। এই মসজিদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট যার একটি দেয়াল পোড়ামাটির এবং অন্য ৩ টি পাথরের তৈরি। তাই মসজিদটিকে পাথরের মসজিদ বা জামে সঙ্গীন বলা হয়ে থাকে। 

২.৪২ একর জায়গা জুড়ে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার ও প্রস্থ ৭.৫ মিটার। এই স্থানটি মুসলিম ধর্মালম্বীদের জন্য পবিত্র স্থান হিসেবে গন্য।  নিপুন নির্মাণের এই মসজিদটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭.৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

কিভাবে যাবেন

আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে যেতে হলে শুরুতেই আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন।

তবে যে পথেই আসুন না কেন, চট্টগ্রাম শহরের ষ্টেশন রোড এলাকা থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে আন্দরকিলা জামে মসজিদ যাওয়া যাবে। 

থাকার হোটেল বা রিসোর্ট:

চট্টগ্রাম শহরে থাকার মত অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন। আগ্রাবাদ, ষ্টেশন রোড সহ বিভিন্ন স্থানে অনেক ধরনের আবাসিক হোটেল রয়েছে, আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী যে কোনো হোটেল থাকতে পারেন। এদের মধ্যে হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল হিল টন সিটি, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল মিসকা, এশিয়ান এসআর হোটেল অন্যতম।

খাওয়ার স্থান:

চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাবেন- বাংলা, চাইনিজ থেকে শুরু করে ফাস্টফুড সহ প্রায় সব ধরনের দেশি বিদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। তবে চট্টগ্রামে আসলে এখানকার জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার মেজবান এবং কালাভুনা খেতে ভুলবেন না যেন। 

৩) বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার (Shrine of Bayazid Bostami):

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রামের  নাসিরাবাদে অবস্থিত। বায়েজিদ বোস্তামী একজন পার্সিয়ান সুফি ছিলেন। ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরের দিকে ওনার সমাধি আবিষ্কৃত হয়। এই পাহাড়টির পাদদেশে রয়েছে একটি মসজিদ যা তিন গম্বুজবিশিষ্ট এবং সেখানে রয়েছে একটি দিঘী।

তাকে উৎসর্গ করেই এই মাজারটি নির্মান করা হয়। 

এই মাজারের পাদদেশে যে দিঘী অবস্থিত তাতে  বায়োজিদ বোস্তামীর কিছু কাছিম এবং গজার মাছ রয়েছে,  আঞ্চলিকভাবে এরা মাজারী এবং গজারী নামে পরিচিত। এই কাছিমের প্রজাতি বর্তমানে পৃথিবীতে বিরল এবং বিপনাপন্ন। প্রজননের সময় এদের জন্য পাহাড়ের পিছনে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।বায়েজীদ বোস্তামীর দিঘিতে রয়েছে প্রায় ২০০-৩৫০ টি কাছিম।এই কাছিমগুলো মূলত এই মাজারের বিশেষ আকর্ষণ। 

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে করে চট্টগ্রাম শহরে এসে শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি কিংবা বাসে করে মাজারে চলে যেতে পারেন।

বায়েজিদ লিংক রোড। ছবিঃ সীতাকুণ্ড উপজেলা ফেসবুক পেজ থেকে।

থাকার হোটেল বা রিসোর্ট :

চট্টগ্রাম শহরে নানা মানের নানা বাজেটের হোটেল পাবেন।

যেমন: হোটেল প্যারামাউন্টে নন এসি সিংগেল রুমের ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা এবং ডাবলের ভাড়া পড়বে ১৩০০ টাকা, এসি রুমগুলোর ভাড়া ১৪০০-১৮০০ টাকা করে।

হোটেল সাফিনায় রুম ভাড়া ৭০০ থেকে শুরু ১৩০০  টাকা বা এর উপরেও রুম পাওয়া যাবে।

আগ্রাবাদে অবস্থিত হোটেল ল্যান্ডমার্কে ভাড়া পড়বে ২৩০০ টাকার আশেপাশে।

আপনি আপনার সুবিধামত যে কোনো হোটেল রুম ভাড়া নিতে পারেন।

৪)সাহেব বিবি মসজিদ 

সাহেব বিবি নামক এই মসজিদটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ যা চট্টগ্রামের রাউজানে অবস্থিত। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর পত্নী এবং চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মালকা বানুর মাতা। এতে প্রবেশেএ জন্য  ৪ ফুট উভু একটি ফটক রয়েছে। এই মসজিদে রয়েছে একটি গম্বুজ,৮ টি পিলার,৩ টি দরজা ও ২ টি জানালা।

মসজিদের পাশেই রয়েছে মরহুম সাহেব বিবির কবরস্থান। এর পাশে রয়েছে সাহেব বিবি দিঘী যা শাহী পুকুর নামেও পরিচিত। 

কিভাবে যাবেন

যে কোন জায়গা থেকে বাস, ট্রেন বা রেলে করে চট্টগ্রাম শহরে আসতে পারেন। চট্টগ্রামের মুরাদপুর হতে রাউজানের জলিলনগরে নামতে হবে। এখান থেকে লোকান সি এন জি তে করে সাবেহ বিবি মসজিদে পৌঁছে যেতে পারেন।

থাকা এবং খাওয়ার জায়গা:

চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন। মান এবং সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা ভাড়ায় ভাল রুম  পাওয়া যাবে।

আর খাওয়ার জন্য অনেক হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও খেতে পারবেন।

৫) ওয়ালি খান মসজিদ

চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় ওয়ালি খান মসজিদ নামক একটি মসজিদ রয়েছে যা মুসমিলদের ঐতিহাসিক নিদর্শন বহন করে। ১৮ শতকের এই মসজিদটির নির্মাতা মোঘল ফৌজদার ওয়াল বেগ। মসজিদের প্রবেশপথ ৩ টি এবং এই স্থাপনার চারপাশে রয়েছে অষ্টভুজ। বারবার সংস্করণের কারণে এই মসজিদের সুনিপুণ শৈলি  নষ্ট হয়ে গেছে ।

কিভাবে যাবেন:

চট্টগ্রাম শহরে এসে বাস বা অটোতে করে চকবাজার একালায় আসলেই এই মসজিদটি দেখতে পাবেন।

থাকার হোটেল এবং খাওয়ার ব্যবস্থা :

চট্টগ্রাম শহরের থাকা এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ এবং সুবিধা অনুযায়ী থাকার এবং খাওয়ার হোটেল বেছে নিতে পারবেন।

৬) মসজিদ-ই সিরাজ উদ দৌলা

চট্টগ্রামের অতি প্রাচীন একটি মসজিদ হলো চন্দনপুরা মসজিদ। চট্টগ্রাম শহরের চকবাজারের সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে এটি অবস্থিত। ইতিহাস অনুযায়ী, মসজিদটি ১৮৭০ সালে নির্মিত। কথিত আছে, লখনৌ এবং মুম্বাই থেকে আর্কিটেক্ট আনিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অপরূপ সুন্দর এই মসজিদের নকশা দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। এটি আন্দরকিল্লা এবং চকবাজার চৌরাস্তার মধ্যে অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন :

চট্টগ্রাম শহরে এসে বাস বা অটোতে করে চকবাজারের সিরাজ উদ দৌলা সড়কে এই মসজিদটি দেখতে পাবেন।

থাকার হোটেল এবং খাওয়ার ব্যবস্থা :

চট্টগ্রাম শহরের থাকা এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দ এবং সুবিধা অনুযায়ী থাকার এবং খাওয়ার হোটেল বেছে নিতে পারবেন।

৭) চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড়টি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত। সীতাকুন্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে এই পাহাড়টি অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সায় করে চট্রগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়া যায়। 

যদি আপনি পায়ে হেঁ‌টে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যান, তাহলে পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে দেখতে পারেব জুমক্ষেত এবং ফুলের বাগান।

চন্দ্রনাথ পাহাড় এর উচ্চতা ১১৫২ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ঝর্ণার পাশ থেকেই পাহাড়ে উঠার রাস্তা পাবেন। এইখানে মূলত দুইটি রাস্তা রয়েছে। একটি রাস্তা হলো সিড়ি দিয়ে গড়া আর আরেকটি রায়াতা পুরোপুরি পাহাড়ি। পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামূলক সহজ আর সিড়ি দিয়ে নিচে নামা সহজ। 

সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। সাধারণত ১-২ ঘন্টার মত লাগে এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে। পাহাড়ে উঠার সময় ১০-২০ টাকার বাশের কঞ্চি নিয়ে উঠতে পারেন, এতে করে আপনার পাহাড়ে ওঠা সহজ হবে। বৃষ্টির সময় পাহাড়ে ওঠা থেকে বিরত থাকবেন। পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরের কাছেই রয়েছে ছোট টং দোকান সেখানে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পেয়ে যাবেন।তবে পাহাড়ে ট্র‍্যাকিং এর সময় সাথে পানি নিতে ভুলবেন না। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি উপলক্ষ্যে প্রচুর হিন্দুধর্মালম্বী এই পাহাড়ে এসে পুজো দেয়। 

ছবিঃ সীতাকুণ্ড উপজেলা ( ফেসবুক পেজ )

কিভাবে যাবেন:

চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। তাই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে হলে শুরুতেই আপনাকে আসতে হবে সীতাকুন্ডে। 

ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুন্ড যেতে হলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালি বা যে কোন বাস স্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন। বাসের সিটের শ্রেনীভেদে ভাড়া পড়বে ৪০০-১২০০ টাকা।

অথবা, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে উঠে ফেনী স্টেশনে নামবেন।এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জন প্রতি ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে রিক্সা বা অটোতে করে ফেনীর মহিপালে যাবেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে বা সিন এন জি তে করে সীতাকুন্ড যেতে পারবেন।

থাকার হোটেল বা রিসোর্ট:

সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য হোটেল সৌদিয়া, সাইমুন সহ সীতাকুণ্ড বাজারে  আরো কয়েকটি মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল পাবেন। চাইলে আগে থেকেই এসব হোটেল বুক করে রাখতে পারেন। এখানে টেলিকমিউনিকেশনের অধীনে একটি ডাকবাংলোও আছে। অনুমতি নিয়ে সেখানেও থাকা যেতে পারে। তাছাড়া চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে আরো অনেক থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন।

কোথায় খাবেন

সীতাকুণ্ডে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। তবে ভাল খাবার পরিবেশনায় এখানে হোটেল আল আমিনের বেশ নাম ডাক রয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার তো আছেই। 

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাশাপাশি সীতাকুন্ডে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ২-৩ দিনের প্ল্যান করে সীতাকুণ্ড ঘুরে আসতে পারেন।

চট্টগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থান সমূহ একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরা কঠিন। কেননা আমাদের বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্থানগুলোর অধিকাংশই চট্রগ্রামে অবস্থিত। আমরা এখানে চট্রগ্রামের সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে ইসলামি ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে কিছু সেরা ট্যুরিস্ট স্পট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

এই যান্ত্রিক জীবন যাত্রা থেকে ২-৩ দিনের ছুটি নিয়ে পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন চট্রগ্রামের এসব প্রসিদ্ধ স্থান থেকে। 

Leave a Comment

Scroll to Top