কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন জাহাজের তালিকা, ভাড়া ও সময়সূচি

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কক্সবাজার বেড়াতে গেলে কমবেশি সবারই পরিকল্পনা থাকে একসাথে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসবে। স্বচ্ছ পানিতে সামুদ্রিক প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রানীর সমারোহ আর নারকেল গাছের সারির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইলে সেন্টমার্টিন ভ্রমনের বিকল্প নেই।

তবে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে এই রুটে ভ্রমণ বিষয়ক সকল তথ্য যথাযথভাবে জেনে নেয়া জরুরী। কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য জাহাজ রয়েছে। তবে ‘কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন’ এই রুটেই বেশিরভাগ পর্যটক যাতায়াত করে।

কেননা এই রুটে সাধারণত বেশি সংখ্যক জাহাজ রয়েছে এবং খরচও তুলনামূলক কম। তাছাড়া কক্সবাজার জেলা সদর ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য জাহাজ রয়েছে। তাছাড়া টেকনাফ থেকে ট্রলারে করেও সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমনের সকল গাইডলাইন পাবেন। জানতে পারবেন কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজের সময়সূচি, ভাড়া, সুযোগ সুবিধা। সেই সাথে ট্রলারে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সকল দিকনির্দেশনাও জানতে পারবেন।

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের সবশেষে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কক্সবাজার ও চটগ্রাম জেলা থেকে নদীপথে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সাথে যোগাযোগ করা যায়। কক্সবাজার জেলা শহর ও কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। জেলা শহর ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন এর দূরত্ব আলাদা।

আপনি যদি টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে যাত্রাপথে দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে ৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা শহর থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে৷

সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচলের মৌসুম

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজ মূলত সারাবছর চলাচল করে না। শুধুমাত্র শীতের মৌসুমেই এই রুটে জাহাজ চলাচল করে। কেননা বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে ফলে দুর্যোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ-সময় ভ্রমন তরী সমুদ্রের বুকে অনিরাপদ থাকে বলে জাহাজ চলাচল স্থগিত থাকে।

সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল মাস পর্যন্ত কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করে। তাই সেন্টমার্টিন ভ্রমনের পরিকল্পনা থাকলে নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে যাওয়াই ভালো। অন্য সময়ে গেলে অবশ্য স্পিডবোট বা ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। কিন্তু এভাবে ভ্রমন করাটা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ।

সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী জাহাজ

কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি পরিচিত ও জনপ্রিয় জাহাজ রয়েছে। তবে এই রুটের সবগুলো জাহাজ বর্তমানে চলমান নেই। এখানে বর্তমানে চলমান সবগুলো জাহাজের তালিকা, ছেড়ে যাওয়ার স্থান, সময়সূচী, শ্রেণিভেদে ভাড়া ও অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হলো।

১. কর্ণফুলী এক্সপ্রেস

কক্সবাজার জেলা সদর থেকে সেন্টমার্টিন এর উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একমাত্র জাহাজ ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ‘। জাহাজ চলাচলের মৌসুমে এটি নিয়মিত কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করে। এটি একটি ক্রুজ জাহাজ যা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন।

এই জাহাজে ভিআইপি কেবিন সহ তিন ক্যাটাগরির আসনে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। মোট কেবিন রয়েছে ১৭ টি এবং সকল ক্লাস মিলিয়ে জাহাজটিতে ৫০০ আসন ব্যবস্থা রয়েছে। আরও আছে কর্পোরেট অনুষ্ঠান স্পেস, পার্টি স্পেস, নামাজের জায়গা, রেস্টুরেন্ট, পর্যাপ্ত ওয়াশরুম ব্যবস্থা, সি ভিউ উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন সিটিং প্লেস। জাহাজের আনাচে কানাচে প্রতিটি পয়েন্ট যথাযথ ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে।

জাহাজটি কক্সবাজারের এয়ারপোর্ট রোডের নুনিয়াছড়া বিআইডাব্লিউ জেটি ঘাট ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে। কক্সবাজার থেকে জাহাজ ছাড়ার সময় জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল। জোয়ার ভাটার উপর ভিত্তি করে জাহাজটি ভোর ৫ টা থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করে।

এক্ষেত্রে জাহাজ কখন ছাড়বে সে বিষয়ে আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে রাখতে হবে। আবার সেন্টমার্টিন থেকে বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্যেশ্যে জাহাজ ছেড়ে আসে।

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে মোটামুটি ৫ ঘন্টার মতো। আবার ফিরতি পথেও একই সময় লাগে।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আসা যাওয়ার টিকেট একসাথে কাটা যায়। এতে ঝামেলা কম হয় ও নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করা যায়। তাই প্রায় সব জাহাজেই আসা যাওয়ার খরচ মিলিয়ে ভাড়া নির্বাচন করা হয়।

পাশাপাশি শুধু যাওয়ার টিকেট কাটারও ব্যবস্থা রয়েছে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজে শ্রেনি ও কেবিনের ধরন ভেদে ভাড়ায় বৈচিত্র্যতা রয়েছে। জেনে নিন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এর টিকেট মূল্য সম্পর্কে বিস্তারিত।

১) ইকোনমি ক্লাস চেয়ার (ল্যাভেন্ডার/মেরিগ্লোড):
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৯৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৮০০ টাকা।

২) ওপেন ডেক চেয়ার:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১০৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ২০০০ টাকা।

৩) বিজনেস ক্লাস চেয়ার(গ্লাডিওলাস):
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১৬০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৩০০০ টাকা।

৪) লিলাক লাউঞ্জ:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১৬০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৩০০০ টাকা।

৫) ভিআইপি লাউঞ্জ:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১৭০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৩৩০০ টাকা

৬) সিঙ্গেল কেবিন (১ জন):
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২২০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৪০০০ টাকা

৭) টুইন কেবিন (২ জন)
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৪৫০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৮০০০ টাকা

৮) ভিআইপি কেবিন (২জন)
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৬৫০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১২,০০০ টাকা

৯) ভিভিআইপি কেবিন (২ জন)
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৮০০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৫,০০০ টাকা

টিকেট কাটার পরে টিকেট বাতিল করলে ভ্রমনের সময়ের ২৪ ঘন্টা আগে বাতিল করতে হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকেট বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। ২৪ ঘন্টা আগে টিকেট বাতিল করলে মোট টিকেট মূল্য থেকে ৫০ শতাংশ টাকা ফেরত পাবেন।

অনলাইনে টিকেট কাটতে পারবেন। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ভিজিট করে অতবা সরাসরি মোবাইলে যোগাযোগ করে টিকেট বুক করতে পারেন।

  • ওয়েবসাইট: http://karnafulyexpress.com/
  • ফেসবুক: fb.com/Karnafuly-Express-107989827423151/
  • মোবাইল: ০১৮৭০-৭৩২৫৯১ বা ০১৮৭০-৭৩২৫৯৮

২. এম.ভি বার আউলিয়া

ছবিঃ এম। ভি বার আউলিয়া

টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে সম্প্রতি এম. ভি বার আউলিয়া জাহাজটি চলাচল শুরু করেছে। এই জাহাজটি ২০০২ সালে জাহাজটি চীন থেকে আমদানি করা হলেও এটি অন্য রুটে চলাচল করত। সম্প্রতি টেকনাফ থেকে যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ার টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে এই জাহাজটি চলাচল শুরু করেছে। জাহাজটিতে ২৫টি কেবিনের পাশাপাশি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৮০০টি আসন রয়েছে।

টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে জাহাজটি সকাল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে সেন্টমার্টিন এর উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সেন্টমার্টিন থেকে আবার ফিরতি জাহাজ ছাড়ে বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে।
শ্রেণি অনুযায়ী এম.ভি বার আউলিয়া জাহাজের টিকেট মূল্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। জেনে নিন এম.ভি বার আউলিয়া জাহাজের টিকেট মূল্য সম্পর্কে বিস্তারিত।
১) রিভেরা বিজনেস চেয়ার:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৮৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৬০০ টাকা

২) প্যানারোমা বিজনেস চেয়ার:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৮৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৬০০ টাকা

৩) মেইন ডেক:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৭৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৪০০ টাকা

৪) ১ম তলা সামনের সিট ও ২য় তলা মাঝখানের সিট
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৭৫০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১৪০০ টাকা

৫) ফ্যামিলি কেবিন বাঙ্কার বেড (৪ জন):
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৩৫০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৬০০০ টাকা

৬) ডবল কেবিন বাঙ্কার বেড (২ জন):
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১৮০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৩৫০০ টাকা

৭) ডিলাক্স কেবিন:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২৮০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৫০০০ টাকা

৮) ভিআইপি কেবিন:
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৪০০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ৮০০০ টাকা

৯) সান ডেক ভিভিআইপি কেবিন (এটাচ ওয়াশরুম সহ)
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৫৫০০ টাকা
আপ ডাউন ভাড়া ১০,০০০ টাকা

সরাসরি ঘাট থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন অথবা অনলাইনেও টিকেট বুক করতে পারবেন। অনলাইনে টিকেট বুক করার জন্য সরাসরি মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে পারেন।

For Ticket Call: +880 01977886877, 01678076361-69
মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ: ০১৬৭৮-০৭৬৩৬৩ বা, ০১৬৭৮-০৭৬৩৬৮
ওয়েবসাইটঃ https://mvbaroaulia.com/

গুরুতর কোনো সমস্যা ছাড়া টিকেট ক্যানসেল করার সুযোগ নেই। সময়মতো জাহাজ ধরতে না পারলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ কোনো দায়ভার বহন করবে না এবং টিকেট বাতিল হিসেবে ধরা হবে।

৩. কেয়ারি সিন্দাবাদ

টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী সবথেকে জনপ্রিয় জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ। জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এর ভাড়া অন্যান্য জাহাজের থেকে তুলনামূলক অনেক কম। যেহেতু ভ্রমনের ক্ষেত্রে সকলেই একটু সাশ্রয়ী মাধ্যম খোঁজে তাই কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের ডেক যাত্রীদের সমাগমে সব সময়ই ভরপুর থাকে। এই জাহাজের মোট আসন সংখ্যা ৩৪৬ টি। জাহাজের ভেতরে ক্যান্টিন রয়েছে তাই যাত্রাপথে খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিশেষ চিন্তার কোনো কারণ নেই।

টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে জাহাজটি নিয়মিত সকাল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে ছাড়ে। সেন্টমার্টিন থেকে আবার বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা ৩০ মিনিটে ফিরতি যাত্রা শুরু করে।

এই হাজাজে তিন শ্রেনির ডেকে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। শ্রেণীভেদাভেদে ভাড়ার তালিকা তুলে ধরা হলো।
১) মেইন ডেক (নিচতলা)
আপ ডাউন ভাড়া ১০০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৫৫০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৪৫০ টাকা

২) ওপেন ডেক (দোতলা)
আপ ডাউন ভাড়া ১৩০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৭০০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৬০০ টাকা

৩) ব্রিজ ডেক (দোতলা)
আপ ডাউন ভাড়া ১৪০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৭৫০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৬৫০ টাকা

কেয়ারি সিন্দাবাদ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকেট বুক করতে পারবেন অথবা সরাসরি অফিস বা ঘাট থেকেও টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ অফিস লোকেশন ও যে কোনো তথ্য জানতে কেয়ারি সিন্দাবাদ এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।

  • অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.kearitourismbd.com/
  • হটলাইন নাম্বার: ১৬৪৬০ বা, ০১৮৪৭৩২৩৭০৫-০৬

বি. দ্র: অনলাইন টিকেট কাটার পরেও ভ্রমনে ২৪ ঘন্টা আগে বা এর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে টিকেট এর মূল কপি সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইন প্রিন্ট কপি বা এসএমএস দেখালে ভ্রমনের অনুমতি দেয়া হবে না। ২৪ ঘন্টার আগে আসল টিকেট ইস্যু করা হয় না৷ তাই ভ্রমনের ২৪ ঘন্টা আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা টেকনাফ অফিস থেকে টিকেটের আসল কপি সংগ্রহ করুন।

৪. কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন

টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী একটি বিলাসবহুল ও জনপ্রিয় জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন। জাহাজটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও চমৎকার ডেকোরেশন সমৃদ্ধ। টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে সকাল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে জাহাজটি সেন্টমার্টিন এর উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি যাত্রা করে বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা ৩০ এর মধ্যে।

কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন জাহাজে ৩ শ্রেনির ডেক রয়েছে। শ্রেণিভেদ ভাড়ায় বৈচিত্র্য রয়েছে। জেনে নিন কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন জাহাজের টিকেট মূল্য।

১) মেইন ডেক (এক্সক্লুসিভ লাউঞ্জ):
আপ ডাউন ভাড়া ১২০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৬৫০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৫০০ টাকা

২) ওপেন ডেক (কোরাল লাউঞ্জ):
আপ ডাউন ভাড়া ১৫০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৮০০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৭০০ টাকা

৩) ব্রিজ ডেক (পার্ল লাউঞ্জ):
আপ ডাউন ভাড়া ১৭০০ টাকা
শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া ৯০০ টাকা
শুধুমাত্র ফিরতি ভাড়া ৮০০ টাকা

চাইলে সরাসরি ঘাটে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন অথবা অনলাইনে বুকিং দিয়ে রাখতে পারবেন। কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ভিজিট করে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন। সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে বা হোয়াটসঅ্যাপ করে টিকেট বুকিং দিতে পারবেন।

  • হোয়াটসঅ্যাপ: ০১৬৩২-৫৫৫৩৩৩
  • মোবাইল: ০১৬৩৫-৯৯৯০০০
  • ফেসবুক: https://m.facebook.com/KeariCruiseAndDineShipTicket/

৫. বে-ওয়ান

ছবিঃ বে ওয়ান

চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একমাত্র জাহাজ বে-ওয়ান। এটির পূর্বনাম ছিল ‘সালভিয়া মারু’। এটি একটি ফাইভ স্টার ক্যাটাগরির জাহাজ যেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাবেন। কেবিন ও ডেক মিলিয়ে জাহাজটিতে ২০০০ যাত্রীর আসন ব্যবস্থা রয়েছে।

এই জাহাজে প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট কেবিন, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, সুইমিংপুল, কনফারেন্স হল এবং পর্যাপ্ত ওয়াশরুম সহ আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাই ভ্রমনের পুরোটা সময়ই কাটাতে পারবেন খুব স্বাচ্ছন্দ্যে।

জাহাজটি সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামের ওয়াটার বাস টার্মিনাল পতেঙ্গা ১৫ নাম্বার ঘাট থেকে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় যাত্রা শুরু করে এবং সেন্টমার্টিন গিয়ে পৌঁছায় পরদিন সকাল ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে। আবার সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু করে শনিবার সকাল ৯ টায় এবং চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায় রাত ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে।

ডেক ও কেবিনের শ্রেনী ভেদে ভাড়ায় বৈচিত্র্যতা রয়েছে। জেনে নিন বে-ওয়ান জাহাজের বিভিন্ন শ্রেণির ডেক ও কেবিনের ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত।

১) ইকনোমি ক্লাস (চেয়ার ২য় ও ৩য় তলা)
আপ ডাউন ভাড়া ৫০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২৮০০ টাকা

২) বিজনেস ক্লাস চেয়ার (৪র্থ তলা )
আপ ডাউন ভাড়া ৫৫০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৩০০০ টাকা

৩) ওপেন ডেক চেয়ার (৭ম তলা)
আপ ডাউন ভাড়া ৬০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৩২০০ টাকা

৪) সিঙ্গেল বাঙ্কার বেড (৫ম তলা):
আপ ডাউন ভাড়া ৬৫০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ৩৫০০ টাকা

৫) ফ্যামিলি বাংকার বেড (৭ম তলা): আপ ডাউন ভাড়া ৩৫,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ১৯,০০০ টাকা

৬) ভিআইপি প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট (২জন) ৬ষ্ঠ তলা:
আপ ডাউন ভাড়া ৩৮,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২০,০০০ টাকা

৭) রয়্যাল সুইট (২জন) ৭ম তলা:
আপ ডাউন ভাড়া ৪০,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২২,০০০ টাকা

৮) ভিআইপি প্রেসিন্ডেন্সিয়াল প্লাস (৪জন) ৬ষ্ঠ তলা:
আপ ডাউন ভাড়া ৪৫,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২৩,০০০ টাকা

৯) ভিভিআইপি কেবিন (২জন) ৭ম তলা:

আপ ডাউন ভাড়া ৪৫,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২৩,৫০০ টাকা

১০) দ্যা এম্পেরর’স কেবিন (২জন) ৭ম তলা:
আপ ডাউন ভাড়া ৫০,০০০ টাকা
ওয়ান ওয়ে ভাড়া ২৬,০০০ টাকা

অনলাইন টিকেট কাটতে সরাসরি ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। তাছাড়া ফেসবুক পেইজ ভিজিট করে কিংবা হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করে বুকিং দিতে পারবেন।

  • ওয়েবসাইট: https://bayone.com.bd
  • ফেসবুক: https://m.facebook.com/MVBAYONECruise/
  • মোবাইল: ০১৬১০-০৫১০০৫ বা, ০১৯৬৭-৬৭০৭০৭

প্রতিটি জাহাজ সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য:
১) ৫ বছরের নিচে শিশুদের কোনো ভাড়া প্রদান করতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রি-তে ভ্রমন করতে পারবে।
২) ডবল কেবিনে ২ জনের বেশি এবং ফ্যামিলি কেবিনে ৪ জনের বেশি যাত্রী ভ্রমন করলে অতিরিক্ত যাত্রীর জন্য সাধারণ ডেকের টিকেট কাটতে হবে।

৩) আপ ডাউনের টিকেট একসাথে কাটাই ভালো। সেক্ষেত্রে টিকিট সংগ্রহ করার সময় ফেরত আসার তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

৪) ফিরতি জাহাজ মিস হয়ে গেলে বা নির্দিষ্ট তারিখে ফেরত আসতে না পারলেও ঐ টিকেট দিয়ে পরবর্তী টাইম শিডিউলের জাহাজে আসতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সিট পাবেন কিনা তার নিশ্চয়তা থাকবে না। সিট না পেলে দাঁড়িয়ে আসতে হবে।

৫) জাহাজের ভাড়া যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া এখানে একটি সম্ভাব্য ভাড়ার তালিকা প্রদান করা হয়েছে। শ্রেনী ভেদে ভাড়া সামান্য কম বেশি হতে পারে।

ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়

টেকনাফ থেকে সকালের জাহাজ ধরতে না পারলে ট্রলারে করেও সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। কেননা সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ট্রলারের দুলুনি বেশ মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাছাড়া যে দিকে চোখ যাবে সমুদ্রের পানি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না।

আপনি যদি একজন এডভেঞ্চারপ্রেমী হয়ে থাকেন তবেই ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
টেকনাফ শহরের লামার বাজার থেকে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে ট্রলার ছেড়ে যায়। ট্রলার সাধারণত সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটার মধ্যেই ছাড়ে। তবে সঠিক সময় নির্ভর করে জোয়ারের উপরে।

জোয়ারের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রলার ছাড়া হয়। জোয়ারের সময় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে। তাই টেকনাফ পৌঁছে আগে জেনে নিতে হবে ঐ দিনের ট্রলার ছাড়ার সঠিক সময়। ট্রলারে ভাড়া সাধারণত ২২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

এই ছিলো সেন্টমার্টিন ভ্রমনের জাহাজ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি আপনার সেন্টমার্টিন ভ্রমনে সহায়ক হবে। একটি সুন্দর ও সুপরিকল্পিত ভ্রমনের জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ছবি গুলো জাহাজের ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া। মূল ফটোগ্রাফার সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য নেই তাই সাধারন ভাবে ধরে নিয়েছি ছবি গুলোর মূল মালিকানা জাহাজ কর্তৃপক্ষের।

Leave a Comment

Scroll to Top