সৌদি আরবের দর্শনীয় স্থান এবং ইতিহাস, ভাষা, আয়তন ও ধর্ম

এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত সবথেকে বড় আরব দেশ হলো সৌদি আরব। সরকারি ভাবে দেশটির নাম সৌদি আরব সাম্রাজ্য এবং আরবি নাম আল- মামলাকাতুল- আরাবীয়াতুস- সূঊদিয়া‎। এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও শক্তিশালী মুসলিম প্রধান দেশ।

সৌদি আরবের মোট আয়তন ২১,৪৯,৬৯০ বর্গ কিলোমিটার বা ৮,৩০,০০০ বর্গ মাইল। আয়তনের দিক থেকে এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ এবং আরব বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক ৩৩,০০০,০০০।

সৌদি আরবের রাজধানীর নাম রিয়াদ এবং দেশটির বৃহত্তম নগরী দাম্মাম। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব ৬ টি আমিরাত বা প্রশাসনিক রাজ্যে বিভক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর রাজ্য সংখ্যা ১৩ টি। আরবিতে এই রাজ্য বা প্রদেশগুলোকে মানাতিকু ইদারিয়্যাহ বলা হয়।সৌদি আরব পুরোপুরি একটি মুসলিম প্রধান দেশ। দেশটি পুরো বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত। কেননা ইসলাম ধর্মের মূল কেন্দ্র পবিত্র কাবা ঘর সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত।

সৌদি আরবের ভৌগোলিক অবস্থান

পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের কিনার ঘেঁষে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ সৌদি আরবের অবস্থান। আয়তনের দিক থেকে সৌদি আরব পৃথিবীর ১৪ তম বৃহত্তম দেশ। সৌদি আরবের মূল ভূ-খন্ডের বেশিরভাগই স্থলাঞ্চল। সৌদি আরবের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য চার হাজার দুইশত বাহাত্তর কিলোমিটার। সৌদি আরবের সাথে মোট সাতটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।

সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী দেশগুলো হলো: ইরাক, জর্দান, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। সৌদি আরবের উত্তর দিকে জর্দান ও ইরাক, উত্তরপূর্ব দিকে কুয়েত ,পূর্ব দিকে কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্বে ওমান ও দক্ষিণ দিকে ইয়েমেন অবস্থিত।

সৌদি আরবের ইতিহাস

সৌদি আরবের মানবসভ্যতার ইতিহাস দুই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। তবে বর্তমান সৌদি আরবের রাজনৈতিক ভীত তৈরির ইতিহাস শুরু হয় ১৭৪৪ সালে। সৌদি আরবের ইতিহাসে দেশটি দুবার সারাবিশ্বে নিজেদের প্রভাব ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। একটি হলো ৭ম শতাব্দীত, যাখন মুহাম্মাদ (সঃ) এই দেশে ইসলামের প্রচার শুরু করেন এবং বিশ্বব্যাপী অসংখ্য লোকজন ইসলামের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিটি মুসলমানেরই সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনে একবার হলেও পবিত্র এই নগরীতে হজ্জ করতে আসার নিয়ম চালু হয়।

আর দ্বিতীয়টি হলো বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়, যাখন বিশাল তেলের মজুদ আবিষ্কৃত হয়।তেলের সন্ধান মেলার পরেই দেশটি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্ব পেতে শুরু করে।
রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু থেকেই দেশটিতে রাজতন্ত্র মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ পরিবার দেশটিকে শাসন করেছে। তবে বর্তমান রাজ পরিবারের শাসনামল শুরু হয় ১৯৩০ সাল থেকে। ১৯৩০ সালে আব্দুল আজিদ সৌদি আরবে নিজের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সৌদি আরবের শাসনভার বহন করেন।

আর এভাবেই সৌদ রাজবংশের অধিপত্য স্থাপিত হয় সৌদি আরবের বুকে, যা এখনও বিদ্যমান আছে। আব্দুল আজিজ এর পরে এখন পর্যন্ত তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী সৌদি আরবের পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৫৩ সালে আব্দুল আজিজ এর মৃত্যুর পরে তার পুত্র রাজা সৌদ সৌদি আরবের শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ পরবর্তী উত্তরাধিকারী হন ফয়সাল যিনি সৌদি আরবকে পুরোপুরি বদলে দেন। ১৯৭৫ সালে তার ভ্রাতুষ্পুত্রের দ্বারা হত্যার পরে তার শাসনামলের অবসান ঘটে।

পরবর্তীতে ফাহাদ ১৯৮২ সালে রাজা হয়েছিলেন এবং তারপরে ২০০৫ সালে সৌদি আরবের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন আবদুল্লাহ। ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারীতে রাজা আব্দুল্লাহর মৃত্যুবরনের পরে রাজা সালমান এই দেশের রাজা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

সৌদি আরবের জাতীয় পতাকা

সৌদি আরবের জাতীয় পতাকার নকশা প্রমান করে দেয় যে এটি একটি মুসলিম প্রধান দেশ। পুরোপুরি সবুজ ক্ষেত্রের ওপর সাদা অক্ষরে ইসলাম ধর্মে মূলমন্ত্র ‘কালিমায় তাইয়্যেবাহ ‘ লেখা এবং নিচের অংশে একটি শায়িত সাদা তরবারি।

পতাকাটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩:২। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের ১৫ তারিখ হতে সৌদি আরবের বর্তমান জাতীয় পতাকার নকশাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝখানের লেখাটির অক্ষর রীতি হল কিছুটা থুলুথ ধাঁচের।

পতাকার গাড় সবুজ রং ইসলাম ধর্মের প্রতীক বহন করে। মাঝখানের লেখাটি ইসলাম ধর্মের মূলমন্ত্রকে তুলে ধরে ।

সৌদি আরবের প্রচলিত ভাষা

সৌদি আরবের সরকারি ভাষা আরবি। সরকারি কর্মকাণ্ড এবং বই পুস্তকে শুদ্ধ আরবি ভাষা ব্যবহার করা হয়। তবে সৌদি আরবের কথ্য ভাষায় শুদ্ধ আরবির ব্যবহার নেই বললেই চলে। সৌদি আরবের স্থানীয়রা আরবি ভাষায় আঞ্চলিক উপভাষা ব্যবহার করেই মনের ভাব প্রকাশ করে।

সৌদি আরবে সাধারণত আরবির বেশ কয়েকটা আঞ্চলিক উপভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায়।এর মধ্যে রয়েছে- নজদী আরবি, হেজাজি এবং উপসাগরীয় বা খালিজি আরবি সহ কথ্য আরবির তিনটি প্রমিত উপভাষা।

আরবি ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার ও চর্চা করা হয়। সৌদি আরবে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার মধ্যে বিদেশি প্রবাসীর সংখ্যাও কম নয়। সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যা ৩,৪৭,৬০,০০০ জন যার মধ্যে আড়াই কোটি সৌদির স্থানীয় বাসিন্দা আর বাকি ৯৭,৬০,০০০ জন বাসিন্দা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত।

এসকল বিদেশী বাসিন্দারা নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলেন। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে সৌদি আরবের প্রচলিত আরও কিছু ভাষা হলো- তাগালগ, রোহিঙ্গা, উর্দু, মিশরীয় আরবি ইত্যাদি। সৌদি আরবের বাক প্রতিবন্ধী জনগণ সৌদি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে৷

সৌদি আরবের অর্থনীতি

অর্থনৈতিক দিক থেকে সৌদি আরব বিশ্বের মধ্যে বেশ সমৃদ্ধশীল একটি রাষ্ট্র। সৌদি আরবের অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বের আঠারোতম বৃহত্তম অর্থনীতি। এই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশীলতার সবথেকে বড় কারণ হলো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা। সবথেকে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ হলো তেল ও পেট্রোলিয়াম। সৌদি আরব বিশ্বের পেট্রোলিয়ামের বৃহত্তম রপ্তানিকারক।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রমাণিত পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে এই দেশে। তেলে রপ্তানিতেও সৌদি আরবের নাম উল্লেখযোগ্যভাবে তালিকায় চলে আসে। তবে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সৌদি সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যতা আনা যায় এবং একতরফা কোনো সম্পদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে না হয়।

এক্ষেত্রে শিল্পখাত, সেবা খাত, কৃষি খাতে বেশ গুরুত্ব জোরদার করা হয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম খেজুর উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়া গাড়ি, ইলেকট্রনিক, তৈরি পোশাক, পর্যটন, পানীয় উৎপাদন ইত্যাদি খাতে সৌদি আরবের অর্থনীতি এখন অনেকটাই নির্ভরশীল।

তেল ও পেট্রোলিয়াম ছাড়াও সৌদি আরবের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ হলো: স্বর্ণ, রৌপ্য, লোহা, তামা, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, টংস্টেন, সীসা, সালফার, ফসফেট, সাবানপাথর এবং ফেল্ডস্পার।
সৌদি আরব দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে অসংখ্য প্রবাসী জনশক্তিরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সৌদি আরবের আবহাওয়া ও জলবায়ু

সৌদি আরবের জলবায়ু হলো অনেকটা শুষ্ক মরুভূমির জলবায়ু। এই অঞ্চলে দিনের বেলায় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং রাতের বেলায় একদমই নিম্ন তাপমাত্রা লক্ষ করা যায়। তবে কখনও কখনও তাপমাত্রা এতোটাই বেশি থাকে যে রাতেও স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। তবে অঞ্চলভেদে তাপমাত্রার তারতম্য লক্ষ করা যায়। জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার লক্ষ করা যায়। এই সময়ে পুরো দেশের গড় তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

সৌদি আরবে প্রধানত চারটি ঋতুর আনাগোনা হয়। এগুলো হলো- :গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত এবং বসন্ত। তবে গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুর আগমনটাই তীব্রভাবে লক্ষ করা যায়। শীতের সময় কোনো কোনো অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত এবং তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গ্রীষ্মের সময় প্রায়ই এখানে বালিঝড় হয়ে থাকে। সৌদি আরবে প্রতি বছর প্রায়১২ থেকে ৩০ বার বালির ঝড় আঘাত হানে।

সৌদি আরবের সংস্কৃতি

সৌদি আরবের সংস্কৃতি পুরোপুরি ইসলামিক ধাচের এবং অনেকটা রক্ষণশীল। ইসলামিক আইন বা বিধিবিধান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ সৌদি আরবে পরিচালিত হয় না বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে শুরু করে সামাজিক ও পারিবারিক সব ধরনের কাজকর্মে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রভাব প্রবলভাবে লক্ষ করা যায়।

আরবীয় সমাজ সাধারণত পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারের পুরুষ এবং তুলনামূলক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির হাতেই পুরো পরিবারের দায়ভার থাকে। বাড়ির মহিলাদের শুধু ঘরোয়া কাজের প্রতি মনোনিবেশ থাকে।
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ, বর্ষবরণ এবং আরবি গুরুত্বপূর্ণ দিবস গুলো বেশ আয়োজনের সাথে পালিত হয় এই দেশে। তাছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ও উটের লড়াইয়ের মতো জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই দেশের বাসিন্দারা নিজেদের চিত্ত বিনোদনের আয়োজন করে থাকে।

আরবীয় মহিলারা সাধারণত পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরিধান করেন এবং কোনো প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে কালো রঙের আবায়া পরিধান করেন। আবায়া হলো পুরো শরীর ও মাথা আবৃত রাখে এমন এক ধরনের পোশাক। খুব ঘনিষ্ঠ আত্নীয় না হলে বাড়ির মহিলারা নিজেদেরকে লোকসমাগমে নিয়ে আসতে পছন্দ করেন না।

সৌদি আরবের বাসিন্দারা খুবই সামাজিক এবং কর্তব্যপরায়ণ। যদি কোনো প্রতিবেশী বা আত্নীয় স্বজন অসুস্থ থাকে বা আর্থিকভাবে কষ্টে থাকে তাহলে তার ধনী প্রতিবেশী বা আত্নীয় তাদের সাহায্য করতে বাধ্য থাকে। তাছাড়া আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সমিতি সৌদি আরবে প্রচলিত আছে।
ছুটির দিনে সৌদি আরবের লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। তাইতো ছুটির দিনগুলোতে তারা কোনো দর্শনীয় স্থান বা আত্মীয়দের বাড়িতে সফর করতে বেড়িয়ে পরেন।

সৌদী আরবের নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাস

সৌদি আরবের খাদ্যাভ্যাস অন্যান্য আরব দেশগুলোর সাথে অনেকাংশেই সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দেশের বাসিন্দারা অনেক বেশি অতিথিপরায়ণ এবং যে কাউকে পাত পেরে খাওয়াতে বেশ ভালোবাসে। সব ধরনের রেস্তোরাঁ গুলোতে পুরোপুরি হালাল পদ্ধতিতে রান্না করার বাধ্যতামূলক আইন চালু আছে। তাছাড়া পারিবারিক ভাবে রান্না করা প্রতিটা খাবারেই হালাল খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়।

সৌদি আরবের প্রতিটি পরিবার একসাথে বসে একটি পারিবারিক ভোজনের আয়োজন করতে ভালোবাসে এবং খাওয়ার আগে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট শুকরিয়া আদায় করে। সৌদি আরবের খাবারগুলো মূল উপকরণ হিসেবে সাধারণত গম, চাল, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, দই, আলু, সামুদ্রিক খাবার, খেজুর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

আরবি কফি এই অঞ্চলের মানুষের খুবই জনপ্রিয় খাবার।
রমজানে সারাদিন রোজা রেখে সৌদি আরবের লোকজন আরবি কফি, খেজুর ও যে কোনো ঠান্ডা পানীয় খেয়ে রোজা ভঙ্গ করে। কফি ও খেজুরে থাকা প্রচুর ক্যালরি সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য শক্তি যোগায়।

সৌদি আরবের জনপ্রিয় কিছু খাবার হলো-

১. হিনি
২. ম্যাডফুন
৩. মান্ডি
৪. জারেশ
৫. কাবসা
৬. মিতাজিজ
৭. মার্কুক
৮. অসিদাহ
৯. মুতাব্বাক
১০. সম্বোসা
১১. সালেগ
১২. খেজুর মহল্লা
১৩. মবশুর
১৪. মান্থু
১৫. রোজ বুখারী
১৬. কানাফেহ
১৭. মুহাল্লেবী
১৮. বাসবউসা
১৯. উম্মে আলী (ইত্যাদি)

সৌদি আরবের দর্শনীয় স্থান সমূহ

পুরো বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সৌদি আরব একটি পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ্জ ও ওমরাহ এর উদ্যেশ্যে সৌদি আরবে আসেন। হজ্জ পালনের পাশাপাশি হাজীগন ঘুরে দেখতে পারে সৌদি আরবের দর্শনীয় অসাধারণ বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ থেকে শুরু করে সৌদি আরবের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জাদুঘর, সমুদ্র সৈকত ও বিভিন্ন পার্ক যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। 

১. মসজিদ আল হারাম

সৌদি আরবে মুসুল্লিদের মূল গন্তব্য থাকে মক্কা নগরীতে অবস্থিত মসজিদ আল হারাম। এই মসজিদেই পবিত্র কাবা ঘর অবস্থিত। মসজিদের বিশাল জনসমাবেশ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

২. মসজিদে নববী

সৌদি আরবের মদিনা শহরে অবস্থিত মসজিদে নববী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। এই মসজিদে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজা মোবারক অবস্থিত। হাজার হাজার মুসুল্লি এই মসজিদে ভীড় জমায় নবীজীর রওজা মোবারক জিয়ারত করতে।

৩. উম্ম আল কামারি দ্বীপ

সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উম্ম আল কামারি দ্বীপ অন্যতম। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও সামুদ্রিক শৈবাল, সাথে নানা প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায় এই দ্বীপে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য চমৎকার একটি স্পষ্ট উম্ম আল কামারি দ্বীপ।

৪. কাসর আল-ফরিদ

কাসর আল-ফরিদ সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন দুর্গ যা দ্য লোনলি ক্যাসেল নামেও পরিচিত। দুর্গটি বেশ প্রাচীন হলেও এখনও এর জৌলুশ অনেকটা ধরে রাখতে পেরেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই স্পটটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

৫. আল নাখিল মল

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ শহরের অন্যতম জনপ্রিয় শপিং কমপ্লেক্স আল নাখিল মল। এখানে শুধু কেনাকাটার উদ্দেশ্যেই নয়, চমৎকার বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ গুলোতে পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর জন্যও পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা যায়। তাছাড়া এরাবিয়ান পোশাক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এখান থেকে কেনাকাটা করা যায়।

৬. আল রাহমা মসজিদ

সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে অবস্থিত অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন আল রাহমা মসজিদ। লোহিত সাগরের বুকে স্থাপিত পিলারের ওপর এমনভাবে মসজিদটি নির্মান করা হয়েছে যে, দেখলে মনে হয় সাগরের বুকে মসজিদটি ভাসছে।একজন্য এটিকে ভাসমান মসজিদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। মসজিদটির আরও একটি আকর্ষণ হলো এর ফিরোজা রঙের গম্বুজ।

৭. দিরাহ সৌক

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ শহরের থুমাইরি স্ট্রিটে অবস্থিত দিরাহ সৌক শহরটির একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মার্কেট। এখানে আরবের পুরাতন নকশার খাটি সোনার গহনা পাওয়া যায়। এছাড়া পোশাক, কার্পেট এবং ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্যের এক বিশাল সমাহার এই দিরাহ সৌক। সৌদি আরবের ইতিহাস সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা পাওয়া যায় এই মার্কেটে আসলে।

৮. দাম্মাম কর্নিচ

বিশাল জলরাশির মধ্যে ভেসে ভেসে পরিবার পরিজনের সাথে দারুণ একটা বিকেল কাটাতে চাইলে চলে যেতে হবে দাম্মাম কর্নিচ। আরও উপভোগ করতে পারবেন তীরের বিলাসবহুল ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁর ঐতিহ্যবাহী এরাবিয়ান খাবার।

৯. আসির ন্যাশনাল পার্ক

এটি সৌদি আরবের সবথেকে জনপ্রিয় পার্ক যা কিনা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,৫২২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। বন্য প্রাণী এবং গাছপলার এক বিশাল সমারোহে এক দিনের জন্য হারিয়ে যেতে চাইলে সৌদি আরবের উপযুক্ত স্পষ্ট আসির ন্যাশনাল পার্কে চলে যেতে হবে।

১০. আল নাখিল সমুদ্র সৈকত

সৌদি আরবের সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে আল নাখিল সমুদ্র সৈকত সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ নীল জলরাশি এবং পাম গাছের সারি দেশ বিদেশের পর্যটকের সব সময়ই হাতছানি দিতে থাকে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রানের ভূমি সৌদি আরব দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে যেমন সমৃদ্ধশালী তেমনই সারাবিশ্বে খুবই সুপরিচিত একটি দেশ। বিশ্বমঞ্চের মুসলিম সভ্যতার কাছে এটি একটি পবিত্র দেশ হিসেবে সুপরিচিত।

Leave a Comment

Scroll to Top